মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত করি
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্ব। বায়ান্ন সালের এই দিনে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের গুলিতে ঢাকার রাজপথে শহীদ হন রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার প্রমুখ। তাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের মায়ের ভাষা পায় যথাযোগ্য মর্যাদা। বর্তমানে একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের মতো বিশ্বের অনেক দেশে আজ গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় দিনটি উদযাপন করা হয়।
৭৩ বছর আগের সেই ইতিহাস মুছে যাওয়ার নয়। সেই ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, তমদ্দুন মজলিস নামে একটি নবগঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিরলস চেষ্টায় ভাষার মর্যাদার দাবি জনগণের মনে তিলে তিলে জায়গা করে নেয়। মানুষ সংগঠিত হয়, সোচ্চার হয়। সংগঠনটি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকেও মর্যাদা দেয়ার দাবি তোলে। এ দাবির পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন পূর্ব বাংলার প্রথম সারির বুদ্ধিজীবীরা। ১৯৪৮ সালের মধ্যে তারা রাষ্ট্রভাষার দাবি জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হন। ১৯৫২ সালের প্রথম দিকে তমদ্দুন মজলিসের এ দাবি তৎকালীন পূর্ব-বাংলার ছাত্র-জনতার প্রধান দাবিতে পরিণত হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ দাবির গভীরতা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়। গণমানুষের দাবি অস্ত্রের ভাষায় দাবিয়ে রাখার হঠকারিতা দেখায়। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের মিছিলে বাধা দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে এক পর্যায়ে ছাত্রমিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। দিনটি ছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, তখনকার বাংলা বর্ষপঞ্জি মোতাবেক ৮ ফাল্গুন।
কেন্দ্রীয় শাসকরা উর্দুকে পূর্ব-বাংলার মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করেন। এটি ছিল এক অবাস্তব সিদ্ধান্ত। কারণ, উর্দু দেশের কোনো প্রদেশের ভাষা ছিল না। অন্য দিকে, বাংলা ছিল পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা। তদানীন্তন পাকিস্তানে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে প্রায় সব বিবেচনায় বাংলা ছিল অগ্রগণ্য। তাই বাংলার রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পাওয়ার দাবি ছিল ন্যায়সঙ্গত।
একুশে মূলত বাংলাদেশের মানুষকে একটি সংগ্রামী চেতনা উপহার দিয়েছে। সেই পথ ধরে জাতির স্বাধীনতার স্পৃহা স্ফুরিত হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে, স্বাধীনতার দাবি জোরদার হয়। পাকিস্তান সরকারের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এটি ছিল স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। ১৯৭০ সালে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করার মধ্য দিয়ে সরকারের ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রকাশ ঘটে। পরিণামে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়।
বাংলা আজ স্বমহিমায় শুধু রাষ্ট্রভাষা নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু অস্বীকারের উপায় নেই জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে এর প্রতিষ্ঠা হয়নি। ভাষার মূল চেতনা থেকে আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি। ‘আকাশ সংস্কৃতি’র প্রভাবে শিশুরা হিন্দিতে বলতে অভ্যস্ত হচ্ছে। চলছে ইংরেজির অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসন। এর মধ্যে, বাংলার মর্যাদা কিভাবে রক্ষা পাবে তা-ই চিন্তার বিষয়। বিদেশী ভাষা শেখার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। সময়ের সেই প্রয়োজন আর মাতৃভাষার মর্যাদার মধ্যে ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ভাবতে হবে। শুধু বাগাড়ম্বর করে বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা দেখানোর সুযোগ নেই। মাতৃভাষাকে জীবনের সাথে মিলিয়ে নিতে বাস্তব ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ৩০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা জাতিসঙ্ঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে যাতে স্বীকৃতি পায় সেই চেষ্টা করতে হবে। এটি হলে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলার ব্যবহারিক গুরুত্ব বাড়বে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা