২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`
হাসিনাকে দিল্লির ফেরত দেয়ার প্রশ্ন

কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে

-

বিশ্বের নিকৃষ্টতম দুঃশাসনের নমুনা স্থাপনকারী শেখ হাসিনা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত খুনি। তিনি ঠাণ্ডামাথায় নির্বিচারে মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্র, নির্দেশনা এবং সমন্বয় করেছেন। গত বছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়ে শিশুসহ প্রায় দেড় হাজার মানুষ হত্যা করেছেন। শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন বিক্ষোভকারী ছাত্রদের গুলি করে হত্যা ও তাদের লাশ গুমের। গত ১২ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি এখন সারা বিশ্বে প্রমাণিত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খুনির বিচার নিশ্চিত করা যেকোনো রাষ্ট্রের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব। ফলে খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে তার আশ্রয়দাতা ভারত এখন স্বাভাবিকভাবে ক্রমবর্ধমান চাপে পড়ছে। চাপ তৈরি হচ্ছে শুধু বাইরে থেকে নয়, অভ্যন্তরীণভাবেও।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে পরিচালিত ‘মুড অব দ্য নেশন’ শিরোনামের জরিপ বলছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের ৫৫ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পক্ষে। ২৯ শতাংশ চায় হাসিনা যেন আর ভারতে না থাকেন। তবে ২৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, শেখ হাসিনা যেহেতু ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন, তাই তাকে আশ্রয় দেয়া ঠিক। তাদের এ অবস্থানে আরো অনেকের সম্মতি আছে। ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা শশী থারুর হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর বলেছিলেন, দিল্লির পরম মিত্র শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়াই উচিত। বিজেপি ও কংগ্রেস এ ক্ষেত্রে একাট্টা। কারণ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ভারতকে বিনাযুদ্ধে, বিনা মাসুলে রীতিমতো উপনিবেশ স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত খুনির বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা বর্তমান সময়ে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে খুব কঠিন একটি কাজ; বরং গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তদের বিচারে নৈতিক সমর্থন এবং সহযোগিতা দেয়া প্রত্যেক রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

শুধু ভারত চাপে পড়ছে এমন নয়। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোও হাসিনার বিচার বিষয়ে নিস্পৃহ থাকতে পারছে না। জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা যেন কোনোভাবে দায়মুক্তি না পান। এর ফলে হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের পথ সুগম হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের ফিরিয়ে এনে গণহত্যার দায়ে বিচার করব। তার মানে, হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিকল্প বোধহয় ভারতের কাছে খোলা থাকছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়ায় জাতিসঙ্ঘকে যুক্ত করা হলে ভারত কোনোভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারবে না। তবে আমরা জানি, ভারত এমন একটি দেশ, যে নিজের স্বার্থে অকূটনৈতিকসুলভ আচরণ করতে দ্বিধা করে না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর মতো ঘটনার পরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ধরনা দিয়েছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ নিয়ে। সুতরাং হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে বিরত থাকতে পারে ভারত, এমন আশঙ্কা থেকেই যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি আইসিসি বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ দায়ের করে তাহলে ভারতের চক্রান্ত নস্যাৎ করা যেতে পারে বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement