২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`
ব্যবহারের অনুপযোগী ফুটওভারব্রিজ

কর্তৃপক্ষ উদাসীন

-

রাজধানীর অধিকাংশ ফুটওভারব্রিজ পথচারীদের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ ফুটওভারব্রিজ পরিণত হয়েছে মাদক কারবারিদের আখড়া আর ভাসমান পতিতাদের আশ্রয়ে। সেই সাথে আছে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য। ফলে পথচারীরা ফুটওভারব্রিজ দিয়ে চলাচলে ভয় পান। অনেকে এসব ফুটওভারব্রিজ এড়িয়ে চলেন।
একটি সহযোগী দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর পরিবাগ ফুটওভারব্রিজে দিনের বেলা পড়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের ভিজিটিং কার্ড- যেগুলো দিয়ে মানুষকে বাজে কাজের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানে সন্ধ্যায় চলে ছিনতাই আর রাতে হয় অসামাজিক কার্যকলাপ। অসামাজিক কার্যকলাপের নানা নমুনা দিনের বেলায়ও সেখানে দেখা যায়। নিউমার্কেট, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার ও উত্তরার ফুটওভারব্রিজগুলোরও প্রায় একই অবস্থা।
ব্রিজগুলো বসানো হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও পথচারীদের চলাচল সহজ করার জন্য। কিন্তু সেগুলো দিনের বেলা মাদক কারবারিদের দখলে থাকে। কখনো কখনো মাদক কারবারিরা পথচারীদের লাঞ্ছনা করে বলে অভিযোগ আছে। ফার্মগেটের এসআরএইচ টাওয়ারের সামনে ফুটওভারব্রিজে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছিল এক ভবঘুরে। এ সময় ব্রিজ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী তার লাঞ্ছনার শিকার হন। ওই নারী শিক্ষার্থী ভয়ে চিৎকার করতে থাকেন এবং দৌড়ে ফুটওভারব্রিজ থেকে নিচে নেমে আসেন। ব্রিজগুলোর কোনো কোনোটির একাংশ ভেঙে পড়েছে। মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। সন্ধ্যা হলেই ফুটওভারব্রিজে ছিনতাই হয়। কিন্তু এসব স্থানে ছিনতাই বন্ধে পুলিশের কোনো ব্যবস্থা বা তৎপরতা নেই। পুলিশ প্রশাসনের কাজ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু তাদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব দেখা যায়। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে পুুলিশ প্রশাসনের আরো কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
সন্ধ্যা হলেই ব্রিজগুলো ভাসমান পতিতাদের খদ্দের সংগ্রহের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়। বহু দিন ধরে এসব অসামাজিক কাজ চললেও তা দেখার যেন কেউ নেই। এখানে অনেক ভালো মানুষকেও অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
রাজধানীর অনেক স্থানে ফুটওভারব্রিজে ওঠার জন্য চলন্ত সিঁড়ির (এস্কেলেটর) ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ ছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ফুটওভারব্রিজে ওঠা চলন্ত সিঁড়িগুলোর অনেকটিই বিকল হয়ে পড়ে আছে।
ফুটওভারব্রিজ তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সিটি করপোরেশন এসব ফুটওভারব্রিজ শুধু তৈরি করেই দায়িত্ব শেষ করে। এগুলো নাগরিকদের চলাচলের উপযোগী আছে কিনা তা দেখার কোনো প্রয়োজন বোধ করে না বলেই মনে হয়। অন্যথায় এসব ফুটওভারব্রিজের আজ এই বেহাল দশা হতো না।
নাগরিকরা রাষ্ট্রের সেবা গ্রহণ করেন ট্যাক্সের বিনিময়ে। কারো করুণার কারণে নয়। রাষ্ট্রের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনোরকম শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। সিটি করপোরেশন একটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। ফুটওভারব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার জন্য সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। একই সাথে ফুটওভারব্রিজ ঘিরে ছিনতাই, মাদক কারবারিদের উচ্ছৃঙ্খলতা ও পতিতাদের অসামাজিক কার্যকলাপ রোধে পুলিশের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
সিটি করপোরেশন ও পুলিশ উদ্যোগী হলে ব্রিজগুলো সব সময় চলাচলের জন্য নিরাপদ হবে। সে ক্ষেত্রে রাজপথে পথচারীর ভিড় কমবে এবং সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে। নগরে যানবাহনের গতিও বাড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement