২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`
আইসিসিতে অভিযোগ দেয়া যেতে পারে

শেখ হাসিনার বিচার গণদাবি

-

দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিচারের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে একাধিক মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে এবং ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচার করবেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ^াস। কারণ, সদ্য প্রকাশ পেয়েছে গত জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ওপর জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের তথ্যানুসন্ধানী রিপোর্ট। এটি সারা বিশে^র মানুষের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এ দলিলে গণহত্যার প্রতিটি ঘটনা যে স্বয়ং শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে এবং তত্ত্বাবধানে ঘটেছে তা প্রমাণিত হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সময়ে নির্বিচার গুলি চালিয়ে অন্তত ১৪০০ নিরস্ত্র মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আহত ও পঙ্গু করে দেয়া হয় প্রায় ১২ হাজার মানুষকে। নিহতদের বেশির ভাগই নিরস্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থী, বিক্ষোভকারী, নারী ও শিশু। হত্যা করা হয় ১১৮ শিশুকে।
অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নৃশংসতার এ পৈশাচিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। আর গণহত্যার পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেন তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
ঘটনাগুলো আমাদের দম বন্ধ করা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। তার পরও জাতিসঙ্ঘের এ রিপোর্ট একটি আন্তর্জাতিক দলিল হিসেবে বিশে^র ইতিহাসে পোক্ত হয়ে থাকবে। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) নিয়ে যাবে এমন আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে আপামর দেশবাসীর মনে। গণহত্যায় প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর জড়িত থাকার প্রমাণ সামনে আসার পর আপাদমস্তক ফ্যাসিবাদী চরিত্রের দলটিকে বাংলাদেশে চিরতরে নিষিদ্ধ করার গণদাবিও জোরালো হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের রিপোর্টে অবশ্য দল নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে মত দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের গত সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনে যে জনগণ দুর্বিষহ যাতনা ভোগ করেছে, যারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে তাদের সান্ত¡না দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই। আর সে জন্য দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের স্বার্থে বিগত সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের যারা হত্যাকাণ্ডসহ গুরুতর অপরাধের সাথে জড়িত, তাদের সবার বিচার হওয়া জরুরি। আমরা চাই রাজনৈতিক কোনো মতপার্থক্যে হাসিনাসহ সব অপরাধীর বিচারপ্রক্রিয়া যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়।
প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, তাদের অপরাধের বিচার করা না হলে দেশের মানুষ অন্তর্র্বর্তী সরকারকে ক্ষমা করবে না। আমরা যতটা বুঝি, হাসিনার বিচার না হলে জাতি কাউকে ক্ষমা করবে না, সে সরকার হোক আর রাজনৈতিক দল হোক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ক’দিন আগে মিডিয়ার সামনে বলেছেন, হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করার বিষয়টি নির্ভর করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। দেশে এ মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তারা সেটি করেন গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যক্ষ নিয়ামকশক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃত্ব, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিসাপেক্ষে। তাই রাজনীতিকদের উপরে পুরো প্রক্রিয়া নির্ভর করছে, এটি পরিষ্কার।


আরো সংবাদ



premium cement