হাসিনার নৃশংসতার দলিল
- ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চব্বিশে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকালে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের নিয়ে যে গণহত্যা চালানো হয়, তা খোদ শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে জুলাই গণহত্যার মূল হোতা হিসেবে দায়ী করা হয়েছে। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর মধ্যে র্যা ব ও এনটিএমসির অপরাধ এতটাই মাত্রা ছাড়িয়ে যায় যে, রিপোর্টে সংস্থা দু’টিকে বিলুপ্ত করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে ৪৪টি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধ। তার সরাসরি পরিকল্পনা এবং নির্দেশনায় জুলাই-আগস্টে নৃশংস সব খুনের ঘটনা ঘটে।
একজন মানুষ নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে কতটা নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক হতে পারে, তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ হয়ে থাকবেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া শেখ হাসিনা নিজে শিক্ষার্থীদের খুন করে লাশ গুম করার নির্দেশও দেন। ফলে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহত হন। জাতিসঙ্ঘের এ প্রতিবেদন হাসিনার নিষ্ঠুরতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দালিলিক প্রমাণ।
বিশ্ব সংস্থার এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই বিক্ষোভে এক হাজার ৪০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রাণঘাতী অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। এসব অস্ত্র সাধারণত সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে। ৬৬ ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মিলিটারির অটোমেটিক অথবা সেমি অটোমেটিক রাইফেলের গুলিতে। নিহতদের মধ্যে ১৩ ভাগই শিশু। লক্ষণীয়, গাজায় ১৫ মাস ধরে কসাই ইসরাইলি বাহিনী যেভাবে নির্বিচারে নারী-শিশুসহ মানুষ হত্যা করেছে ঠিক সেভাবেই হাসিনার অনুগত বাহিনীও ক্ষমাহীন অপরাধ করেছে। জুলাই-আগস্টে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে ঠাণ্ডামাথায় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে শেখ হাসিনার নির্দেশে। ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি, এসবি ও সিটিটিসি সীমাহীন অপরাধ করেছে। বাস্তবতা হলো, শেখ হাসিনা ও তার দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই এসব অপরাধ সংঘটিত হয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ, আনসার, র্যা ব ও বিজিবির পাশাপাশি আওয়ামী এবং ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী কর্মী-সমর্থক অংশ নেয়।
বিশ্ব সংস্থা যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলো আমলে নিলে জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম কাজ হবে শেখ হাসিনার বিচারে বাধা দিতে পারে এমন শক্তিগুলোকে নিষ্ক্রিয় করা। একই সাথে জুলাই গণহত্যার বিচার স্বচ্ছ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। জুলাই গণহত্যার সাথে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের যথাযথ শাস্তি দেশবাসী দেখতে চান। একই সাথে খুনি হাসিনার ফ্যাসিবাদী জমানায় গুম-খুনসহ যত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তারও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক। তবেই আগামীর বাংলাদেশ মানবিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে পারে। তা না হলে আমাদের রাষ্ট্র-সমাজে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দুরূহ হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা