২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`
আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে জটিলতা

চুক্তির ন্যায্যতা আগে দরকার

-

ভারতীয় কোম্পানি আদানিকে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে বলেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আদানিকে চিঠি দিয়েছে।
ভারতে অবস্থিত আদানির ১৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। শীতকালে চাহিদা কম থাকায় সমস্যা হয়নি। বরং বাংলাদেশ থেকেও সরবরাহ কমাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু শীত কেটে যাওয়ায় এখন চাহিদা বেড়েছে এবং তা প্রতিদিনই বাড়তে থাকবে। এ কারণেই পুরোমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বলেছে বাংলাদেশ। তবে বাস্তবতা এটাই যে, বাংলাদেশ বিদ্যুতের দাম সময় মতো পরিশোধ করতে না পারায় আদানি সরবরাহ কমিয়ে দেয়, যা চুক্তির লঙ্ঘন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বিচার লুটপাট, দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অর্থপাচারের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসের প্রান্তে পৌঁছায়। রিজার্ভ নেমে যায় বিপজ্জনক পর্যায়ে। এ কারণেই বাংলাদেশ আদানির পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি। আদানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসে তাগিদও দেন।
সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকার আদানির পাওনা নিয়মিত পরিশোধ করছে। বকেয়া অনেকটা কমে এসেছে। এ ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে পাওনার হিসাব নিয়ে। আদানি ও পিডিবির হিসাবে ভিন্নতা আছে। গত ডিসেম্বরে আদানির সূত্রে বিপিডিবির কাছে কোম্পানির বকেয়া প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার বলে উল্লেখ করা হয়। পিডিবি তখন জানিয়েছিল, পাওনার পরিমাণ সাড়ে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মতো। এ জটিলতার সুষ্ঠু নিরসন জরুরি। তার চেয়েও বড় কথা, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার বিনিময় হিসাবে বাংলাদেশের স্বার্থ পুরোপুরি বিকিয়ে দিয়ে আদানির সাথে চুক্তি করে। এ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মিডিয়ায় অনেক লেখালেখিও হয়েছে। বাংলাদেশের আদালত অসম চুক্তি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির পর্যালোচনার ভিত্তিতে চুক্তির বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার এর আগে অভিযোগ করেছিল, ঝাড়খন্ডে আদানির কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোম্পানিটি ভারত সরকারের কাছ থেকে যে কর সুবিধা পাচ্ছে চুক্তি অনুযায়ী তার অংশ বাংলাদেশকে দিচ্ছে না আদানি। সেটিরও নিরসন জরুরি।
সবচেয়ে বড় বিষয়, চুক্তির শর্তগুলো উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে সমন্বয় করা। মনে রাখতে হবে, আদানি আন্তর্জাতিকভাবেই একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। গত নভেম্বরে মার্কিন বিচার বিভাগ আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি ও কোম্পানির আরো সাতজন নির্বাহীকে ভারতে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত করেন। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি নিয়ে ভাববার অবকাশ আছে। এরা নানা অজুহাত তুলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত করতে পারে। যেমন কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট চালুর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখানো হচ্ছে। এসব জোরালোভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
এটা দিনের আলোর মতো সত্য যে, বাংলাদেশ আদানি থেকে যে বিদ্যুৎ কিনছে তা ভারতেরই অন্য কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুতের দামের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি। এত বেশি মূল্যে বাংলাদেশ কেন বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য থাকবে তারও জবাব জনগণ চায়।


আরো সংবাদ



premium cement