সংস্কারও সমান গুরুত্বপূর্ণ
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠান আবশ্যিক ও প্রাথমিক শর্ত। নাগরিকরা নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেন। এটিই গণতান্ত্রিক-প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার স্বীকৃত উপায়। কিন্তু স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। গত দেড় দশকে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে তা নির্বাসনে পাঠানো হয়।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী জমানার অবসানে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। যেহেতু অভ্যুত্থানের ফসল এই সরকার, তাই জনআকাক্সক্ষা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুদায়িত্বের সাথে সাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আনজাম দিতে কাজ করছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রভাবশালী অংশীজনদের কেউ কেউ নির্বাচনকেন্দ্রিক ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কাজ চলছে বলে বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছে সরকার। গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে এক বৈঠকের পর এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই দিন রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত চাওয়া হয়েছে- চলতি ডিসেম্বরেই চেয়েছেন তারা। সরকারের তরফে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এ বিষয় উপদেষ্টা পরিষদ দেখবেন, সিদ্ধান্ত হলে জানাবেন।’ আর মানিকগঞ্জে অতিসম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে তারা প্রস্তুত হচ্ছেন।
এ দিকে গত সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান ভিন্ন। দলটি সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঘোর বিরোধী।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পেশ করা প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশ করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সদ্য প্রকাশিত এক জরিপের ফল হলো, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ৬৫ শতাংশ মানুষ।
দেশে নির্বাচনমুখী আবশ্যকীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পছন্দের একটি শক্তিশালী ও কার্যকর সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন; এটি অস্বীকার না করেও বলতে হয়, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারে একমত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকারগুলো তিন দশকে শাসনব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনেনি। ফলে গ্রাম-শহরে যেমন, ধনী-গরিবের মধ্যেও বৈষম্য আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
আমরা মনে করি, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দু’টিই একসাথে চালাতে হবে। কোনোভাবে রাষ্ট্র সংস্কার থেকে সরে আসা যাবে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়তার সাথে যা যা করা দরকার তা করবে, এটিই জনপ্রত্যাশা। সঙ্গত কারণে এ কথা অনায়াসে বলা যায়, দ্রুত নির্বাচন আয়োজন এবং সংস্কার কাজ অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্ত হাতে সম্পাদন করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা