১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ শাবান ১৪৪৬
`
গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

অপরাধীদের আইনের আওতায় আনুন

-

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত শুক্রবার ফোন করে ডেকে নিয়ে তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর গত শনিবার গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনাও ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হন মোবাশ্বের হোসেন নামে এক ছাত্র।
গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় থেকেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ। এরপর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলে আওয়ামী লীগের সব রাগ-ক্ষোভ আর আক্রোশের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নানা অপ্রচার চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জনমানসে ঘৃণা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। শিক্ষার্থীদের নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছে। এরই মধ্যে গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত হামলার ঘটনা হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এখানে একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে, কোথাও কেউ আক্রান্ত হলে ডাক পাওয়া মাত্রই শিক্ষার্থীরা সেখানে যাবেন কেন? এসব ক্ষেত্রে পুলিশ ডাকাই কি সঙ্গত নয়? পুলিশের কি দায়িত্ব নয় আক্রান্তের সুরক্ষা দেয়া! এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা সতর্ক থাকবেন বলেই আমরা আশা করি।
কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরই কেবল পুলিশ-প্রশাসন নড়েচড়ে বসে, এটা পুরনো অভ্যাস। জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগের যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন তাদের অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের শৈথিল্য চোখে পড়ার মতো। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আইনের আওতায় আনলে তারা গাজীপুরের মতো ঘটনা ঘটানোর সাহস পেত না।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হঠাৎ করে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনাটিও উদ্বেগের। এ ঘটনা প্রমাণ করে, অপরাধীদের সক্রিয়তা বিন্দু মাত্র কমেনি; বরং বেড়েছে।
ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান পুলিশের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছেন। একই সাথে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে বলেছেন, হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যের প্রতিফলন দেখতে চাই।
গাজীপুরের ঘটনার পর দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার, জুলাই-আগস্টে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নস্যাৎ করতে সরকার গাজীপুরসহ সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে অভিযান শুরু করেছে। অভিযানের সফলতা কামনা করি। পাশাপাশি অপরাধীদের ধরতে গিয়ে যেন কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সূত্রপাত না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এই অপচেষ্টা রুখতে হবে। এ জন্য শুধু পুলিশ-প্রশাসন নয়, সামাজিক-রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
অপরাধ দমনে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার বিকল্প নেই। গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সরকার যথাযথ বিচার নিশ্চিত করবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement