০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ৯ শাবান ১৪৪৬
`
অপ্রয়োজনীয় সীমান্ত হাট ও স্থলবন্দর

অদরকারি প্রকল্প বন্ধ হোক

-

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে যত প্রকল্প নেয়া হয়েছে তার কতটা বাংলাদেশের স্বার্থে আর কতটা ভারতের স্বার্থে- সেটি এক বড় ধাঁধা। বড় উন্নয়ন প্রকল্পে যে বিপুল অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে তার ভূরি ভূরি উদাহরণ উদ্ঘাটিত হচ্ছে। ফাঁস হচ্ছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের তহবিল তসরুপ ও পাচারের অবিশ্বাস্য কেলেঙ্কারি। এর বাইরে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-এমপি এবং অলিগার্কদের নজিরবিহীন লুটপাট, পাচারের ঘটনা তো আছেই। সব মিলিয়ে তারা দেশে এক ‘চোরতন্ত্র’ কায়েম করেছিলেন বলে শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়। এ অভিধা যথার্থ।
সবশেষ জানা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের সময়ে দেশের সীমান্তে ভারতের অনুরোধে স্থাপন করা হয় আটটি সীমান্ত হাট, যেগুলো অবৈধ ভারতীয় পণ্যের বৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের খোলা দরজা হয়ে ওঠে। হাটগুলো স্থাপনে বাংলাদেশী নাগরিকদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পাননি। এ হাটের মাধ্যমে ভারতের চোরাই পণ্য ও মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এসব হাট থেকে গাড়ি ভরে শুল্কমুক্ত ভারতীয় পণ্য কিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বড় বাজারে পাঠাত আওয়ামী লীগের মাঝারি পর্যায়ের নেতা ও ব্যবসায়ীরা। সীমান্তবাসীর কাছে এসব হাট ভারতীয় চোরাই পণ্যের বৈধ হাট হিসেবে পরিচিতি পায়।
সহযোগী একটি দৈনিকে গতকাল প্রকাশিত এ সম্পর্কিত খবরে বলা হয়, মূলত ভারতীয়দের স্বার্থে এসব হাট বসানো হয়। কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারি, সুনামগঞ্জের ডলুরা, ছাগলনাইয়ার পূর্ব মধুগ্রাম, কসবার তারাপুর ইত্যাদি সীমান্ত হাট শুধু দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়েছে তা-ই নয়, দেশের নিরাপত্তায়ও ছিল মারাত্মক হুমকি। বিস্ময়কর হলেও সত্য, আওয়ামী সরকারের অলিখিত নির্দেশনায় বাংলাদেশ অংশের বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি, কাস্টমস ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নিতেন। এতে একতরফা লাভবান হয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে এমনটি ঘটেছে। জাতীয় অর্থনীতি বাঁচাতে হলে এ জাতীয় বাণিজ্যকেন্দ্রের চিন্তা বাদ দিতে হবে। একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেছেন, ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, তিস্তা, ফারাক্কাসহ প্রতিটি চুক্তি ভারতের স্বার্থে করা হয়েছে। বর্ডার হাটও তার ব্যতিক্রম নয়। এসব হাট বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অবশ্য, আওয়ামী সরকারের পতনের পর হাটগুলো বন্ধ আছে। তবে স্থানীয় স্বার্থান্বেষীরা সেগুলো আবারো চালুর তোড়জোড় করছেন।
শুধু সীমান্ত হাটই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণ অদরকারে স্থাপন করা হয় আটটি স্থলবন্দরও। এতে ব্যয় করা হয় সাড়ে চার শ’ কোটি টাকা। জনবল ও পরিচালনা খাতে নিয়মিত ব্যয় হয় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু বন্দরগুলো কোনো উপকারে আসেনি। বন্দরের কর্মীরা প্রায়ই কর্মহীন সময় পার করেন। তিনটি বন্দর থেকে এ পর্যন্ত আয় হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা। মূলত দলীয় নেতা ও মন্ত্রীদের চাপে এসব বন্দর স্থাপন করা হয়। আটটির মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সাতটি বিগত আওয়ামী সরকারের সময় তৈরি। বন্দরসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলো একেবারে অদরকারি।


আরো সংবাদ



premium cement