০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ৯ শাবান ১৪৪৬
`
চকরিয়ায় কাঠ চোরাকারবারিরা সক্রিয়

অপরাধীদের কোনো ছাড় নয়

-

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং বনবিট এখন কাঠ চোরাকারবারি চক্রের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অসাধু বন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন চুনতি রেঞ্জের হারবাং বনবিট এলাকায় রাত নামলে নিধন করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনায়নের গাছপালা। সংশ্লিষ্টদের সাথে আঁতাত করে বনের রকমারি গাছ নিধনে নেমেছে চোরাকারবারি চক্র। একই সাথে বনবিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ম্যানেজ করে হারবাং বনবিটের অধীন বিভিন্ন এলাকার বনভূমি ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে স্থায়ী বসতি। সেই সাথে কাটা হচ্ছে পাহাড়, লুট হচ্ছে বনভূমির বালু। একটি সহযোগী দৈনিকের কক্সবাজার সংবাদদাতার প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই প্রতিবদেন অনুযায়ী, বন, পাহাড় ও বালুখেকোদের কাছ থেকে অতিরিক্ত উৎকোচ আদায় করে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তা। বন বিভাগ এবং স্থানীয় দালাল ও কাঠ চোর সিন্ডিকেটের ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশে বিপুল কাঠ পাচার হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের হারবাং বনবিট কর্মকর্তার সামনে দিয়ে। প্রতিদিন ভ্যানগাড়ি, পিকআপ, ট্রাক ভর্তি করে হাজার হাজার টাকার মূল্যবান সেগুন কাঠ কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে তাদের নির্ধারিত উৎকোচ না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঠবাহী গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পরে বিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাহিদামাফিক টাকা দিয়ে স্টেশন অতিক্রম করতে হয়। এভাবে প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ট্রাক ভেদে চার থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এতে করে পাচারকারীরা অবাধে কাঠ পাচার করতে পারায় হারবাংয়ের বিশাল বনভূমি দিন দিন বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এক কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, বন বিভাগ ও তাদের দালালদের চাঁদা দেয়ার বিষয়টি অনেক পুরনো। যারা বৈধভাবে গাছ নিয়ে আসছে তাদেরও টাকা দিতে হচ্ছে।
হারবাং বনবিটের অধীন এলাকায় বনভূমিতে ইতোমধ্যে আটটি বাড়ির কাজ চলমান থাকলেও চারটির কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। বাকি চারটির কাজ শেষদিকে। এসব বাড়ি নির্মাণের সুযোগ করে দিয়ে জায়গা ভেদে কারো কাছে ২০ হাজার আবার কারো কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন বনকর্মীরা। এসব অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছেন হারবাং বনবিট কর্মকর্তা আবু সাঈদ। তবে চুনতি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বনবিট কর্মকর্তার এসব ব্যাপারে আমি শুনেছি। তাকে কয়েকবার সাবধান করা হয়েছে। এরপরও যদি তিনি এমন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকেন তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শুধু কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং বনবিট নয়, বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে এমন অভিযোগের অন্ত নেই। তাই প্রতিটি বনাঞ্চলে বন বিভাগের কর্মীদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সরকার আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, এটি আমাদের চাওয়া। কোনো পর্যায়ের কর্মচারী যদি অবৈধ কাজে জড়িত থাকেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই বনের কাঠ চুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে।


আরো সংবাদ



premium cement