ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রাথমিক শর্ত হলো টেকসই নির্বাচনব্যবস্থা এবং নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে নির্দিষ্ট সময় পরপর নাগরিকরা ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নিয়ে থাকেন। টেকসই নির্বাচনব্যবস্থায় সব নাগরিক মুক্ত-স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। উন্নত গণতন্ত্রের দেশে এর ব্যত্যয় না ঘটলেও দুর্বল গণতন্ত্রের দেশে ভোটারদের ভোটাধিকার শাসকশ্রেণীর কাছে ভূলুণ্ঠিত হয়ে থাকে। তেমন একটি শাসকশ্রেণী বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আমাদের দেশে জেঁকে বসেছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক হাসিনাসহ তার দোসররা বিতাড়িত হয়েছেন। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের অবস্থা এত নাজুক হয় যে, তিনি নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে দেশের ভোটব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করেন।
দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক জরিপ বলছে, বাংলাদেশে গত তিনটি নির্বাচনে ভোট দেননি অন্তত তিন কোটি ৮০ লাখ তরুণ ভোটার। তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ তরুণ ভোটকেন্দ্রে গেলেও ভোট না দিয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তারা চেষ্টা করেননি। এটি গণতান্ত্রিক দৃশ্যপটে অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।
পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশে ২০০৮-১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে, ১৮-২৮ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা দুই কোটি ২৫ লাখের বেশি বেড়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রতি বছর গড়ে ২৫ লাখ তরুণ ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। ২০২৩ সালের সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ।
১৯৯১ সালে সব দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের দেশ একটি সংসদীয় সরকার এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ২০১৪ সালে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটি শুরু হওয়ার মাত্র ২৪ বছর পরে, ব্যবস্থাটি উল্লেখযোগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এর ফলে বাংলাদেশ একটি হাইব্রিড শাসনব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের শেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচন বিরোধী দলের বয়কট, কম ভোটার উপস্থিতি, বিরোধী নেতাদের কারাদণ্ড, একদলীয় নির্বাচনপ্রক্রিয়া এবং উচ্চ মাত্রার সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং প্রথমবারের মতো ভোটার হওয়া নাগরিকরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।
লক্ষণীয়, অবাধ-সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী গ্রহণ করে, যার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, ২০১১ সালে পাস হওয়া ১৫তম সংশোধনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে, এক দিনের মধ্যে সংসদে ১৫তম সংশোধনী পাস করা হয়, যা দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্কটের সূচনা করে।
প্রকৃত বাস্তবতায় দেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে স্বাধীন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। অতীতেও এই ব্যবস্থার অধীনে বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। তাই সঙ্গত কারণে বলা যায়, এই ব্যবস্থা বা পদ্ধতি দেশে ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতে টেকসই এবং বেশি উপযোগী বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা