০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`
পতিত আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণা

ঐক্যবদ্ধভাবে রুখতে হবে

-

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে অনলাইনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাচ্যুতির পর সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে চলতি ফেব্রুয়ারিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
প্রশ্ন হলো, সদ্য ক্ষমতাচ্যুত একটি দল কিভাবে প্রকাশ্য কর্মসূচি ঘোষণার সাহস দেখায়? এর পেছনের কারণ হিসেবে বলা যায়, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান যুক্ত করে মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনের সংশোধনীর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী করতে না পারা, জুলাই ঘোষণাপত্রসহ বেশ কিছু ইস্যুতে সরকারের শক্ত অবস্থান না নেয়া। পাশাপাশি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের জন্য চাপ দেয়ার বিষয়টিও অনুকূল পরিবেশ হিসেবে বিবেচনা করছে। যার কারণে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর এত অল্প সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করার সাহস দেখাচ্ছে দলটি।
তবে সরকারের তরফ থেকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি দমনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বেশকিছু রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগকে প্রতিহতের কথা বলেছে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে জনগণের বিভিন্ন দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে ছদ্মবেশে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে দলটি। ড. ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রতিনিয়ত সরকারি চাকরিজীবী, গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে রাজপথে নামছেন। এসবের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে পতিত সরকারের সমর্থকরা ইন্ধন দিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করে। লক্ষণীয়, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দুই সপ্তাহের মাথায় আনসার সদস্যরা সচিবালয়ের মতো কেপিআইয়ে গেট ভেঙে ঢুকে পড়েছিল। যেখানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের পদধারীদের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের যে আন্দোলন করছেন সেখানেও আওয়ামী লীগের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত সোমবার নিজ দফতরে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে বলেন, তিতুমীর কলেজের আন্দোলনের পেছনে ইন্ধন আছে।
আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে এবং মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে। ড. ইউনূস বলেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেয়া যাবে না। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে একটি কমান্ড সেন্টার গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
আমরা মনে করি, পতিত স্বৈরাচার এ দেশে আর রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হবে না যদি ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান চলমান থাকলে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। তাই ফ্যাসিবাদ রুখতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement