৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ২৯ রজব ১৪৪৬
`
আমলাদের কারণে স্থবির প্রশাসন

ঠিক করতে হবে সরকারকেই

-

৫ আগস্টের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে দুর্বিষহ ফ্যাসিবাদের পতনের পর দেশ সুষ্ঠু নিয়মতান্ত্রিক ধারায় দ্রুত এগিয়ে যাবে- এটিই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মারাত্মকভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রশাসনসহ সরকারের প্রতিটি অঙ্গ। সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, সরকারি অনেক কাজ যেন চলছে ‘কচ্ছপের পিঠে চেপে’। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার দফতরও মারাত্মক স্থবিরতার শিকার। খবরে বিভিন্ন দফতরের কাজের নমুনা তুলে ধরে বলা হয়, আমলাতান্ত্রিক গ্যাঁড়াকলে পড়ে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে। এমনকি গণ-অভ্যুত্থানের যে মূল আকাক্সক্ষা অর্থাৎ গত ১৫ বছরের আওয়ামী সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, বঞ্চিতদের বঞ্চনার অবসান এবং নির্যাতিতদের প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা করা- সেটিও হয়নি একই কারণে। আমলাদের অসহযোগিতাই এর কারণ। সরকারের উপদেষ্টারাও স্বীকার করেন, সরকার প্রত্যাশিত গতিতে কাজ করতে পারছে না আমলাদের অসহযোগিতায়। একজন উপদেষ্টা সম্প্রতি প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, আমলাদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
একাধিক উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট পত্রিকাকে বলেছেন, আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতায় সরকার গত সাড়ে পাঁচ মাসে প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ করতে পারেনি।
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো- আওয়ামী লীগ আমলে দায়ের করা লাখ লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা এখন পর্যন্ত তুলে নেয়া যায়নি। এ জন্য চার মাস আগে জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়। এই চার মাসে ৬৪ জেলা থেকে মাত্র চারটি মামলার তথ্য পেয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এই একটি দৃষ্টান্ত থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়, সরকার কেমন চলছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, জেলাপর্যায়ের কমিটি কাজ করেনি।
প্রশাসনে আওয়ামী সুবিধাভোগী, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন রাতের ভোটের কারিগর কর্মকর্তারা এখনো বড় বড় পদে বহাল। অথচ বঞ্চিত যোগ্য লোকদের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা যায়নি। সুতরাং যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এ ছাড়া আছে উপদেষ্টা ও আমলাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার সমস্যাও। সবমিলিয়ে বলা যায়, প্রশাসনে রীতিমতো অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এসব বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কয়েকটি সাপ্তাহিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপদেষ্টারা। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি দীর্ঘ দিন নিষ্পত্তি না হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবের ওপরও ক্ষোভও ঝাড়েন কেউ কেউ। কিন্তু পরিস্থিতি যে কে সেই।
একটি বিষয় স্পষ্ট, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত অনেক মহল থেকেই হচ্ছে। এসব মহলের অন্যতম আমাদের আওয়ামী দোসর আমলারা। এ সরকার ব্যর্থ হলে শুধু ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে বিপন্ন হতে হবে তা নয়, ঘোরতর বিপদে পড়বে মদদদাতা রাজনৈতিক শক্তিগুলোও। সবচেয়ে বড় কথা, এ সরকারের ব্যর্থতার অর্থ, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী জাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়া। সুতরাং দেশ ও জাতির কল্যাণকামী সব রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে। সরকারকেও সক্রিয় হতে হবে সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার প্রয়াসে।
প্রশাসন বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার ঠিক থাকলে কারো পক্ষে ফাঁকি দেয়া বা স্থবিরতা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।


আরো সংবাদ



premium cement