চাই মানবিক সমাজ
- ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
জীবনের শৈশব-কৈশোর আর যৌবন পেরিয়ে মানুষ বার্ধক্যে উপনীত হয়। এটি পৃথিবীর নিয়ম। এভাবেই পৃথিবী চলে আসছে। যে মানুষটি যৌবনে তার সর্বশক্তি উজাড় করে দিয়ে আয়-রোজগার করে পরিবার-পরিজন প্রতিপালন করেছেন, বয়সের কারণে প্রবীণ হওয়ার পর তিনি আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। ফলে আয়-রোজগারও তেমন হয় না। অনেক পরিবারে তিনি বোঝা হয়ে পড়েন। তার খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা কিংবা স্বাস্থ্যগত বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের একধরনের উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। এভাবে অনেক প্রবীণ অপুষ্টির শিকার হন।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর এক-চতুর্থাংশই অপুষ্টির শিকার। তাদের মধ্যে বাড়ছে নিরাময় অযোগ্য ব্যাধি। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পুষ্টিহীন লোকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যে প্রবীণের সংখ্যাই বেশি। দেশে প্রতি ১০০ জন প্রবীণের মধ্যে পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন ২৫ জন। আর পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ। পুরুষের তুলনায় অপুষ্টিতে ভোগা নারী প্রবীণের সংখ্যা বেশি। এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৩ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা এক কোটি ৬৪ লক্ষাধিক। শতকরা হিসাবে, মোট জনসংখ্যার ৯.৭ শতাংশ প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে।
প্রবীণ হলে মানুষের আচরণ পাল্টে যায়। তারা শিশুর মতো আচরণ করেন। ফলে প্রবীণ বয়সে একজন মানুষের সাথে তার সন্তানদের কাছ থেকে শিশুর মতোই যতœ আর ভালোবাসা প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের দেশের প্রবীণরা তা পান না। সন্তান বড় হলে বাবা-মায়ের সম্পত্তি ভাগ করে নিয়ে বাবা-মাকে এক প্রকার নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ ও নিরুপায় করে দেয়। পরবর্তী সময়ে তাদেরকে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সত্য বটে, শহরের চেয়ে গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোতেই প্রবীণদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা বেশি। প্রবীণদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য বয়স্কভাতার যে কর্মসূচি সরকারের রয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল। বয়স্কভাতার অর্থ আরো বাড়ানো দরকার। এমন অনেক প্রবীণ আছেন যাদের সন্তান-সন্ততি নেই। নেই তাদের আয়-উপার্জনের কোনো উৎস। এমন মানুষের বয়স্কভাতা একটু বেশি হলে তাদের জীবন চলার পথ কিছুটা হলেও সহজ হবে।
বয়স্কভাতার পাশাপাশি দরকার জনগণের জন্য সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা। আমাদের সমাজেও এখন অনেক সন্তান তার বৃদ্ধ বাবা-মাকে ‘বোঝা’ মনে করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে মর্মন্তুদ এই কাজটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের এমন অবহেলার মনোভাব দূর হওয়া দরকার। বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন-২০১৩’ নামে একটি আইন করেছে ঠিকই; কিন্তু শাস্তির ভয় দেখিয়ে ভালোবাসা আদায়ের চেয়ে মা-বাবার ঔরসজাত সন্তান যেন শেষ বয়সে তাদের বোঝা মনে না করে, তাদের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে না গিয়ে সন্তুষ্টচিত্তে বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ দেয়ার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে বেড়ে ওঠে- এটি নিশ্চিত করা দরকার। বাবা-মা যেমন ছোটবেলায় সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সদা-সর্বদা চিন্তিত থাকতেন, বড় হয়ে সন্তানরাও তেমনি বাবা-মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি যতœবান হবে- এমন বোধ জাগ্রত হলেই সমাজ হবে মানবিক। আর এমন মানবিক সমাজই আমরা প্রত্যাশা করি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা