২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১, ২৭ রজব ১৪৪৬
`
শিক্ষকসঙ্কটে মেডিক্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

চিকিৎসাশিক্ষা এত অবহেলিত কেন

-

চিকিৎসাশিক্ষা সরাসরি স্বাস্থ্যসেবার সাথে সম্পৃক্ত। চিকিৎসাশিক্ষা ভালো হলে ভালো চিকিৎসক তৈরি হবে। ভালো চিকিৎসক বের হলে রোগী ভালো চিকিৎসাসেবা পাবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের চিকিৎসাশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাশিক্ষা কার্যক্রম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতর যেন নির্র্বিকার!
দেশে মোট ৫৬টি সরকারি মেডিক্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ ৩৭টি, ১৮টি বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং একটি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে। এগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের অভাবে মানসম্মত ও গুণগত চিকিৎসাশিক্ষা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য মতে, দেশে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপকের পদ রয়েছে ৮৩৩টি। এর মধ্যে ৫২৩টিই শূন্য। একইভাবে সহযোগী অধ্যাপকের এক হাজার ৫২৬টি পদের মধ্যে ৫৬০টি, সহকারী অধ্যাপকের দুই হাজার ২৮৪টি পদের মধ্যে এক হাজার ৭৮টি, কিউরেটরের ৬২টি পদের মধ্যে ১৩টি এবং প্রভাষকের এক হাজার ৪২০টি পদের মধ্যে ৩০৮টি শূন্য। সব মিলিয়ে ছয় হাজার ১২৫টি পদে মধ্যে দুই হাজার ৪৮২টি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
মেডিক্যাল শিক্ষায় মৌলিক বিষয় ধরা হয় আটটি। এগুলো হলো, অ্যানাটমি, বায়োকেমিস্ট্রি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফরেনসিক মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি ও ভাইরোলজি, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি এবং ফিজিওলজি। এসব মৌলিক বিষয়ে পাঠদানে দুই হাজার পাঁচটি পদের মধ্যে ৫০৯টি শিক্ষক পদই শূন্য রয়ে গেছে।
মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক নিয়োগ হয় একটু ভিন্নভাবে। এখানে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে (বিপিএসসি) স্বাস্থ্য ক্যাডারে যেসব কর্মকর্তা নিয়োগ পান তাদের মধ্যে থেকে প্রভাষক পদে আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়। পরে বিষয়ভিত্তিক পদায়ন করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের সরকারি প্রক্রিয়া জটিল বলে শিক্ষকসঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে কিছু অবকাঠামোগত উন্নতি হলেও স্বাস্থ্যসেবা বরাবর অবহেলিত। আমাদের দেশের চিকিৎসাশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পাশের দেশে গড়ে উঠেছে বিশাল চিকিৎসাবাণিজ্য। আমাদের এ দুর্বলতাকে তারা নানা সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারও করছে। যেমন এখন ভারত আমাদের মেডিক্যাল ভিসা দেয়ায় কঠোরতা অবলম্বন করছে। তাই পরদেশনির্ভর স্বাস্থ্যসেবা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। এজন্য আমাদের চিকিৎসাশিক্ষার উন্নয়নের বিকল্প নেই।
কিছু দিন আগে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, মেডিক্যাল কলেজে অধিক সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে ভাবছে সরকার। আমরা যদি মান ঠিক রাখতে না পারি, অধ্যাপক দিতে না পারি, ভালো শিক্ষক না পাই, তাহলে ভালো ডাক্তার কোথা থেকে তৈরি হবে? সরকারি মেডিক্যাল কলেজে নিয়োগ দিয়েই কাজটি শুরু করা হবে। আমরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কথার দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
অন্য কোনো দেশের চিকিৎসাবাণিজ্য জিইয়ে রাখার উদ্দেশ্যে আমাদের চিকিৎসাশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাত অবহেলিত থাকবে এটি আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। চিকিৎসাশিক্ষার মতো জরুরি বিষয়ে কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকা উচিত নয়। সরকার মেডিক্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে চিকিৎসক তৈরির প্রতিবন্ধকতা দূর করবে এটিই প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement