২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৫ রজব ১৪৪৬
`
নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে অপরাধ

কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই

-

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে হয়। হত্যা, খুন, চাঁদাবাজি, দখল, ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধ এতটাই বেড়েছে যে, জনজীবনে স্বস্তি উবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত গত চার মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে শুধু খুন হয়েছেন ৯৪৭ জন। ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ৭৯৬টি। গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক ১২টি হত্যার ঘটনার একটি ছিল রাজনৈতিক ও জমি নিয়ে বিরোধে, চারটি পারিবারিক কলহজনিত, দু’টি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে, একটি পূর্বশত্রুতার জেরে এবং ছিনতাই-ডাকাতিতে বাধা পেয়ে চারজনকে খুন করা হয়। এর মধ্যে ১০ জনকে খুন করা হয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে, আর দু’জনকে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে।
বিশ্লেষকরা অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পেছনে যেসব কারণ তুলে ধরছেন তার মধ্যে রয়েছে- মানুষের অসহিষ্ণু হয়ে ওঠা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া, দায়িত্বশীলদের জবাবদিহির অভাব ইত্যাদি। এর সাথে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া জরুরি।
জুলাই বিপ্লবের পর পুলিশ বাহিনী ছত্রখান হয়ে পড়ে। ক’দিন আগে ডিএমপির কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাত আলী বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পর পুলিশ একটা ট্রমার মধ্যে ছিল। এখনো পুরো কাটিয়ে উঠতে পারেনি।’ এর সাথে আছে বিপ্লবের পর বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র। এখনো উদ্ধার হয়নি ১৩৯২টি অস্ত্র। সাথে যোগ হয়েছে পতিত স্বৈরাচারের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর অস্ত্রও।
গত ১৬ বছরে হাজার হাজার ঘটনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডারদের প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে অ্যাকশনে দেখা গেছে। সেসব অস্ত্রের সংখ্যা কেউ জানে না। সেগুলো এখন পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। পতিত সরকার ক্ষমতার শেষ দিকে অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বা দাগি অপরাধীকে দেশে ফেরার সুযোগ দেয়। জুলাই বিপ্লবের পরও কয়েকজন জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে। এরা এখন অপরাধ জগতে সক্রিয়। জড়িয়ে পড়ছে দখল, চাঁদাবাজি, খুনোখুনিতে। মগবাজারের বিশাল সেন্টার ঘিরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের অপতৎপরতার খবর পুলিশের কাছে আছে। এদের হাতে অপহরণ ও চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন অনেকেই। তারা মুখ খুলতে পারছেন না।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও আইনশৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, সন্দেহ নেই। সংস্কার, নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ, জুলাই বিপ্লবের ছাত্র নেতৃত্বের রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা ইত্যাদি প্রশ্ন ঘিরে দেশে একটি গভীর রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছে। এ অনিশ্চয়তার সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অপরাধী চক্র।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাঁচ মাস সময়েও রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারেনি- এটি বাস্তবতা। কিন্তু এভাবে দেশ চলতে পারে না। তাই জনজীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত তাদের সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায় নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন দাগি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। অপরাধী কাউকে ছাড় না দেয়া।


আরো সংবাদ



premium cement