২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১, ২৭ রজব ১৪৪৬
`
তদন্তের আওতায় রাতের ভোট

শাস্তি নিশ্চিত হোক

-

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট আগের রাতেই সম্পন্ন হয়ে যায়। এ নিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। বিবিসির প্রতিবেদনে দেখানো হয়, নির্বাচনের আগের রাতে কিভাবে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছিল। দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় অনিয়ম-জালিয়াতির খবর ফাঁস হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে সে নির্বাচন। সরকার ভয়াবহ বৈধতার সঙ্কটে পড়ে। ভারতের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতায় হাসিনা তার শাসনকার্যক্রম চালিয়েছেন। মূলত সে নির্বাচন ছিল রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ঘায়েল করার জঘন্য নজির। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পায় ২৫৭টি আসন। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে দলটি। ওই সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। পায় মাত্র সাতটি আসন। বিরোধীদের ভাষায় সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নিশি রাতের নির্বাচন’।
তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সরকারকে এমন অপকর্ম করতে সহায়তা করে। নির্বাচনটি হয়েছিল কে এম নুরুল হুদার কমিশনের অধীনে। সেই কমিশনের সদস্য মাহবুব তালুকদার বিদায়বেলায় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচন আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি।
দিনের ভোট রাতে করার গণতন্ত্রবিনাশী কর্মটি সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহাম্মেদ সিদ্দিকী, তৎকালীন আইজিপি, র্যা ব ডিজি, ডিএমপি কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচন কর্মকর্তাসহ দেশের জেলা-উপজেলার কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ কর্মকর্তা। অর্থাৎ পুরো সরকার, সরকারি দল ও আমলাতন্ত্রের যোগসাজশে এটি সম্ভব হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। সে অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে পরের তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটিই ছিল নির্বাচনের নামে তামাশা। কিন্তু বারবার এভাবে জয় ছিনিয়ে নিলেও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারেননি শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তার পতন ঘটে। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তিনি।
তবে ‘পাপ ছাড়ে না বাপকে’। এবার ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দিনের ভোট রাতে করা, অপরাধমূলক অসদাচরণ, জাল-জালিয়াতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচনের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ব্যাপারে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে সংস্থাটি। অভিযোগ অনুসন্ধানে বিভিন্ন ভিডিও, দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমের প্রচারিত সংবাদ, নির্বাচনের ফলশিট পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করবে দুদকের গঠিত টিম।
এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে সেরে ফেলার অপকর্মে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। এটি করা হলে ভবিষ্যতে কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে এমন জঘন্য অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সাহস পাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement