২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ট্রাম্প

অস্থির হয়ে উঠবে বিশ্ব!

-


গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন রিপাবলিকান দল থেকে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো বিশে^র সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। এর আগের মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ট্রাম্প একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পান। বিতর্কের বিষয় যেমন ছিল তার ব্যক্তিজীবন, তেমনই সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠিত ধারণার বিরুদ্ধে তার অবস্থান এবং বৈশি^ক নানা ইস্যুতে এমন অবস্থান গ্রহণ যা কার্যত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বিপরীত।

এবার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিনেই ট্রাম্প এমন অনেক নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন যাতে তার উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো আরো তীব্রভাবে সামনে এসেছে। প্রথম দিনেই তিনি বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার বৈশি^ক প্ল্যাটফরম প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়েছেন। তার পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, ট্রাম্প এবার আরো প্রবল ও আগ্রাসী নীতি নিয়ে এগোবেন। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নিয়ে তিনি জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার সাংবিধানিক বিধান বাতিল করে দেয়ার কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরোয়া না করে পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং গালফ অব মেক্সিকোকে যুক্তরাষ্ট্রের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছেন। কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যা ভূরাজনীতি, বৈশি্বক বাণিজ্য, শ্রমবাজার সব কিছুতেই মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। স্বাভাবিকভাবেই এমন প্রশ্ন সামনে এসেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক সহাবস্থানের যেসব নীতির ভিত্তিতে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা ভেঙে পড়ছে কি না। একই সাথে বিশ^ অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ট্রাম্পের নীতির কারণে। কানাডা, মেক্সিকো, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবেন বলে আগেই জানান ট্রাম্প। দেশগুলো পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। এতে অস্থির হতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি।

ট্রাম্প যুদ্ধ অবসানের কথা বলেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এখনই অবসান চান, গাজা যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা রাখেন। আবার আমেরিকার সামরিক সক্ষমতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে চান যেমনটা আগে কখনো ছিল না। অর্থাৎ তিনি সামরিক শক্তি দেখিয়েই বিশ^ শাসন করবেন। গায়ের জোরে, চাপ দিয়ে নিজের স্বার্থ আদায় এবং নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়াই তার পদ্ধতি। এটি প্রকারান্তরে যুদ্ধেরই ভিন্ন রূপ। বিশ্ববাসী তাই ভীত, শঙ্কিত।
ট্রাম্পের কাজেকর্মে বৈপরীত্য স্পষ্ট। তিনি ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইতিবাচক অবস্থান নেন, কিন্তু এমন ব্যক্তিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন যিনি চরম ইসরাইলি সমর্থক। বৈজ্ঞানিক সত্য অস্বীকার করে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ও প্যারিস জলাবায়ু চুক্তি বর্জন করলেও তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ গবেষণার মতো বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সহযোগী হিসেবে পেয়েছেন বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ককে। পেয়েছেন বিশে^র তাবৎ টেক বিশেষজ্ঞদের। এরা বিশে^র সব সম্পদ আমেরিকার মুঠোয় পোরার এক সুপরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারী কর্মসূচি নিয়ে এগোবেন বলে মনে হয়।
ট্রাম্পকে অনেকে অস্থিরচিত্ত ও ক্ষ্যাপাটে মনে করেন। বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। এতদিন বিশ^মোড়ল ছিল একটি দেশ, যুক্তরাষ্ট্র। সেই জায়গাটি নিতে যাচ্ছেন ব্যক্তি ট্রাম্প; ভবিষ্যৎ বিশে^র একক অধিপতি।

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement