প্রয়োজন ইউজিসির নেতৃত্বে নিয়োগ
- ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো- জ্ঞান বিতরণ ও জ্ঞান সৃষ্টি করা। দু’টি কাজেই নিবিড়ভাবে জড়িত থাকেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও যোগ্যতার ওপরই নির্ভর করে জ্ঞান বিতরণ ও জ্ঞান সৃষ্টির কাজ। তারা মেধাবী না হলে এসব কাজ ব্যাহত হয়। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হন তাদের প্রাপ্য প্রকৃত শিক্ষা থেকে। বন্ধ্যাত্ব তৈরি হয় জ্ঞান সৃষ্টির জগতে। জাতি পিছিয়ে পড়ে জ্ঞানের রাজ্যে। বিশ্ব থেকে পিছিয়ে পড়ে দেশ। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেধাবীদের বঞ্চিত করা হয়। মেধার পরিবর্তে স্থান করে নেয় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি।
গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল আওয়ামী লীগ। শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে দলীয় পরিচয়ই মুখ্য হয়ে উঠেছিল। শুধু দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ নয়, এ সময় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির রীতিমতো মহোৎসব চলেছে।
২০১৬ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য পরীক্ষা করে জানা যায়, আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রভাষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এ পদে নিয়োগে তিন লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়। টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নিয়োগের আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম শুরু হয়। নিয়োগ বোর্ড গঠন, যোগ্যতার শর্ত সুবিধামতো পরিবর্তন বা শিথিল করা এবং জবাবদিহি না থাকার মাধ্যমে এই অনিয়মের শুরু হয়। কিছু শিক্ষক পছন্দের শিক্ষার্থীর অ্যাকাডেমিক পরীক্ষার ফল এমনভাবে প্রভাবিত করেন যাতে পরে তাদের নিয়োগ দেয়া যায়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগের সময় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিতেন! একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে যেখানে এমন অনৈতিক লেনদেন হতো সেখানে আর কোন কোন ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেন হতো তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
একটি দেশের উন্নতি অগ্রগতির ইন্ধনের জোগান দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা যত উন্নত হবে তার প্রভাব ততই দেশটির নানা ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হবে। আমরা প্রতিনিয়ত ইউরোপ-আমেরিকার অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড কিংবা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি। তাদের প্রশংসা করি। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মতো উন্নত করার চেষ্টা করি না। অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে পঙ্গু করে রাখি বছরের পর বছর।
আমাদের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী দেশে মেধার মূল্যায়ন না পেয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে শিক্ষকতা করে নাম কুড়াচ্ছেন। তাদের দিয়ে সেসব দেশ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। আমাদের মেধাবীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রচলিত ধারার নিয়োগ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ইউজিসির নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে যথাযথ বাছাই করে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হ্রাস পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আর যেন একজনও অযোগ্য ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে এখনই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন, এটিই প্রত্যাশা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা