২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ মাঘ ১৪৩১, ১৯ রজব ১৪৪৬
`
শিক্ষার্থীদের আত্মহনন প্রবণতা

জীবন ঠুনকো বিষয় নয়

-

সৃষ্টিগতভাবে মানুষ দুর্বল প্রাণী। কষ্ট পেলে অভিমান করে, কাঁদে আবার ভালোবাসায় সেগুলো দূরীভূত হয়। এসব মানব-প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য। মানুষের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আরো আছে- রাগ-ক্ষোভ, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-আকাক্সক্ষা, জেদ প্রভৃতি।
আমরা যে সমাজে বাস করি তা সর্বৈব ভোগবাদী, যেখানে ভোগই সব। এ দেশে চাকচিক্যময় জীবন বেশির ভাগ মানুষের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। ফলে প্রতিনিয়ত অন্যের সাথে তুলনা-প্রতি তুলনা করে জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা নিরূপণের প্রবণতা বাড়ছে। চাওয়া-পাওয়ায় আচ্ছন্ন থাকায় অনেকে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। হতাশা থেকে জন্ম নিচ্ছে অভিমান। অনিয়ন্ত্রিত অভিমানে অনেকে বেছে নিচ্ছে আত্মহননের মতো আত্মবিধ্বংসী পথ।
বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ৩১০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ মাধ্যমিক স্তরের। অভিমান, প্রেম, পড়াশোনার চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক অস্থিতায় ভুগে তারা আত্মহননের পথ বেছে নেন। ২০২৪ সালে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩-১৯ বছর বয়সী, ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এর পরে রয়েছে ২০-২৫ বছর বয়সী, ২৪ শতাংশ।
আমাদের সমাজে অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানদের ভালোভাবে বোঝায় তীব্র সঙ্কট রয়েছে। বাবা চান সন্তান ডাক্তার হবে, মার স্বপ্ন তার সন্তান ইঞ্জিনিয়ার হবে। অথচ সন্তানের ভালো লাগে সাহিত্য। ফলে সন্তানের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে বেছে নিতে হয় নিজের অনিচ্ছার বিষয়। এতে করে পড়ার বিষয় জীবনকে বিষিয়ে তোলে। এ দিকটি অভিভাবকদের ভালোভাবে উপলব্ধি করা উচিত।
গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত খবর হচ্ছে, তরুণ-তরুণীরা প্রেমের কারণে আত্মহত্যা করছেন। বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের সমাজব্যবস্থা আমরা এমনভাবে নির্মাণ করেছি যেখানে বিয়েকে অত্যন্ত কঠিন করা হয়েছে। এতে করে তরুণ-তরুণী উপযুক্ত বয়সে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হতে না পেরে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন, শেষে বিপথগামী হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। সমাজে বিয়ের পথ প্রশস্ত করতে হবে। সন্তান বিয়ে করার উপযুক্ত হলে তাদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষা ও আর্থসামাজিকভাবে দুর্বল আমাদের দেশ। এ দেশে জন্ম নিলে নানা সঙ্কটে বেড়ে উঠতে হয় মানুষকে। এটিই এ দেশের মানুষের নিয়তি। কিন্তু তাই বলে মানুষ যদি নিজেদের জীবনমান উন্নয়ন না করে ভাগ্যের দোষ দিয়ে অভিমান করে বসে থাকে, বিপথে পা বাড়ায় তা অনুচিত। জীবনে স্বপ্ন দেখতে হবে। জীবনকে স্বপ্নের মতো করে গড়ে তুলতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে, স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ না করলে জীবনকে হতাশা গ্রাস করবে। আত্মহননের পথ সহজ হবে। জীবন কোনো ঠুনকো বিষয় নয়; অমূল্য। তাই জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে নিঃশেষ করা কোনোভাবেই উচিত নয়।


আরো সংবাদ



premium cement