১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ মাঘ ১৪৩১, ১৭ রজব ১৪৪৬
`
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র

জাতীয় নিরাপত্তার স্থায়ী সমাধান

-

উৎপীড়ক শাসকদের প্রধান অস্ত্র জাতির মধ্যে বিভক্তি তৈরি করা। ১৫ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশে আমরা এক দানবীয় সরকার দেখেছি। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা ভোগ করা। খুন গুমের শিকার হয়েও জাতি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। মূল কারণ ছিল কৌশলে তারা জাতিকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে রেখেছিল। এজন্য তারা স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, ধর্ম-বর্ণসহ নানা পরিচয় ব্যবহার করেছে। ট্যাগ লাগানো এ ফ্যাসিবাদী কূটকৌশলের কাছে জাতি ধরাশায়ী ছিল। বিভক্ত করার বয়ানকে জুলাই বিপ্লবে ছাত্ররা পরাস্ত করে দানবকে উৎখাত করেছে। ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ছাতার নিচে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ভবিষ্যতে অন্য কোনো জুলুম প্রতিহত করতে হলে এ ঐক্যের ভিত্তি স্থায়ী করতে হবে।
বাংলাদেশের মানুষ একটি মানবিক রাষ্ট্রগঠনে বারবার রক্ত দিয়েছেন। দুর্ভাগ্য হচ্ছে- তাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি, তারা এক ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ভাগ্য পরিবর্তনে যারা ঝুঁকি নিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থহানি করা হয়েছে, এমনকি তাদের জীবন বিপন্ন করা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের স্বার্থ অটুট রাখতে হলে একটি সর্বজনীন ঘোষণাপত্র দরকার, যেন অতীত ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। যেখানে মূল নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের অবদান স্বীকার করে নিতে হবে। এতে জোরালোভাবে উপস্থাপিত হতে হবে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াই-সংগ্রাম। থাকতে হবে তাদের কথা, যারা কোনো ধরনের অপরাধ না করে গুম খুন ও বহুমুখী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী ছাড়া ছাত্রদের ডাকে যারা সাড়া দিয়েছেন প্রত্যেকের অবদান স্বীকার করে নিতে হবে। ঘোষণাপত্রে এ নিশ্চয়তা থাকতে হবে, বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের বীরোচিত কর্মকাণ্ডকে কেউ যেন অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে না পারে। ফাঁকফোকর গলিয়ে ক্ষমতায় এসে কেউ যাতে জুলাই বিপ্লবকে কালিমালিপ্ত করার সুযোগ নিতে না পারে তার স্থায়ী সমাধান করতে হবে ঘোষণার মাধ্যমে। আশার কথা, সব রাজনৈতিক পক্ষ এ ধরনের একটি ঘোষণার তাগিদ বোধ করছে। ঘোষণার বিষয়বস্তু নিয়ে দলগুলোর মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত ভিন্নতা রয়েছে। এমন মতানৈক্য থাকা স্বাভাবিক। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ঘোষণাপত্র তৈরি ও অনুমোদন করিয়ে নেয়া। এ জন্য সব পক্ষের সাথে দফায় দফায় আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। সবাইকে আস্থায় নিয়ে ঘোষণাপত্র তৈরির কাজটি সমাপ্ত করতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঐক্যের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। তিনি ৫ আগস্টকে ঐক্যের প্রতীক বলছেন। সেদিন ছাত্রদের ডাকে সবাই নেমে এসেছিলেন। অথচ মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে পক্ষগুলোর মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের এ পর্যায়ে সাবধানতার পরিচয় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা বিভক্ত। এ বিভক্তি যেন নিজেদের দেশ বিনির্মাণে অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যদি কিছু ছাড় দিতে না পারি, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। যেমন- বহিঃশক্তির সমর্থন নিয়ে হাসিনা দানব আমাদের পীড়িত করেছে। জুলাই বিপ্লবকে আমরা ঐক্যের পাটাতন হিসেবে নিলে এমন দানবদের ভবিষ্যতে রুখে দিতে পারব। জাতীয় নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব ও শান্তির স্বার্থে সবাইকে একজোট হয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র রচনা করতে হবে। এ জন্য দরকার সবার আন্তরিকতা।

 


আরো সংবাদ



premium cement