১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩ মাঘ ১৪৩১, ১৬ রজব ১৪৪৬
`
মেয়াদ শেষ হলেও হয়নি সেতু

ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার শামিল

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের খানসামা (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের খানসামা ও বীরগঞ্জ উপজেলাকে বিভক্ত করেছে আত্রাই নদী। দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াতের জন্য এই নদীর ওপর ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতুর নির্মাণকাজ দীর্ঘ ছয় বছরেও শেষ হয়নি। সেতুর কাজ শেষ না করে এক বছর আগেই লাপাত্তা হয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা যায়, জয়ন্তিয়া ঘাটে কাঠের সাঁকোর পাশে একটি নৌকা বেঁধে রাখা। এখন এই নৌকার তেমন কাজ নেই। ঘাটের ইজারাদারের লোকজন মাছ ধরতে চাইলে নৌকাটি নিয়ে যায়। পাশে থাকা সাঁকোর ওপর দিয়ে কিছু মানুষকে তখন নদী পার হতে দেখা যায়। এ জন্য তাদের টোল দিতে হয়। হেঁটে গেলে গুনতে হয় ১০ টাকা। বর্ষায় সাঁকোটি ডুবে যায়। বেঁধে রাখা নৌকাটি তখন খানসামা ও বীরগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে। টোলের পরিমাণ আরো বাড়ে।
ওই সাঁকোটির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় কয়েকটি পিলার। সেতুর পাঁচটি অংশের তিনটি স্প্যান ঢালাই হয়েছে। অবশিষ্ট পিলারগুলো নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর নির্মাণ কাজে ব্যবহার হওয়া কিছু সামগ্রী, মালবাহী ট্রলি ও পাহারাদারদের রুম রয়েছে। সেখানে অলস সময় অতিবাহিত করছেন কাজ শুরুর সময় থেকে নির্মাণসামগ্রী দেখভালের দায়িত্বে থাকা দু’জন পাহারাদার। এমন চিত্র দীর্ঘদিনের।
জানা গেছে, অধিদফতর (এলজিইডি) জয়ন্তিয়া ঘাটে ৪৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণকাজ শুরু করে। এ সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করলে কাজটি পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুরমা কনস্ট্রাকশন। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরপর দুবার কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এরপরও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫৬ শতাংশ। অবশিষ্ট কাজ ফেলে রেখেই এক বছর আগ থেকে লাপাত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের আওতায় বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের মধুবনপুর ও খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের চেহেনগাজী এলাকায় আত্রাই নদীর জয়ন্তিয়া ঘাটে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে করোনা মহামারীর সময়ে নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে দুই মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করতে ইতোপূর্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবুও কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক। বর্তমানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে।
আগের কাজ আগে করতে হয়। বিশেষত এটি কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। উল্টাপাল্টা করলে হয় না। সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। না করলে সরকার দায়ী হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পালিয়ে যায় কেন? এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। সেখানকার বিপুল জনসংখ্যার দুর্ভোগের অবসানে সেতুটির কাজ সম্পন্ন করতে জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement