১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২ মাঘ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬
`
দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপের পদত্যাগ

ক্ষমতাবানদের জন্য শিক্ষণীয়

-

দুর্নীতির অভিযোগের মুখে পদত্যাগ করেছেন ব্র্রিটেনের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি সে দেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি রোধের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। বিষয়টি বাংলাদেশেও আলোড়ন তুলেছে। কারণ, তিনি বাংলাদেশের দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির মনোনয়নে টানা চতুর্থবারের মতো যুক্তরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হন। গত জুলাইয়ে তাকে সিটি মিনিস্টার পদে নিয়োগ দেয় সরকার।
সম্প্রতি ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানে পতনের পর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করে। এতে টিউলিপের নামও জড়িয়ে যায়। টিউলিপ শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছেন। টিউলিপের বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে আরো একটি ফ্ল্যাট উপহার নেন তারা এক আইনজীবীর কাছ থেকে। সেটিও ব্যবহার করতেন টিউলিপ। কিন্তু আইন অনুযায়ী, সেই সম্পদের তথ্য সরকারকে জানাননি তিনি। এ বিষয়ে ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমে আগেও খবর প্রকাশ হয়। কিন্তু টিউলিপ ক্ষমতার জোরে হুমকি দিয়ে সে সব খবর ধামাচাপা দেন। শুধু সম্পদের তথ্য গোপন করাই নয়, শেখ হাসিনার সাথে তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। এসব অভিযোগ এখন তথ্যপ্রমাণসহ ফাঁস করে দিচ্ছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম। বিশেষ করে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি থেকে শেখ হাসিনা, টিউলিপ, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর ব্রিটেনের পত্র-পত্রিকা সোচ্চার হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে বাংলাদেশে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত চলছে ব্রিটেনেও। ২০১৩ সালে মস্কোতে ভøাদিমির পুতিনের সাথে শেখ হাসিনার বৈঠকে টিউলিপ উপস্থিত ছিলেন। সে ছবি তখন ফলাও প্রচার পায় ব্রিটিশ গণমাধ্যমে। এ ছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগেও শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম আসে। এটিও তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দীর্ঘ সময় মন্ত্রী পদ আঁকড়ে থাকেন টিউলিপ। সম্প্রতি সমালোচনা তীব্র হয়ে ওঠে। বিতর্ক সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পরই টিউলিপ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। টিউলিপ নিজেই এক্সে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগের কথা জানান।
পদত্যাগপত্রে তিনি স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালনের দাবি করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারও বলেছেন, নিরপেক্ষ তদন্তে টিউলিপের দুর্নীতির প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু রূপপুর পরমাণু প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পূর্ণ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত টিউলিপের সততা বিষয়ে নিঃসন্দেহ হওয়ার উপায় নেই। বাংলাদেশের শেখ পরিবার যে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত তার যথেষ্ট বিশ^াসযোগ্য কারণ আছে। যুক্তরাষ্ট্র্রে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের তদন্ত চলমান। ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক থেকে প্লট নেয়ার অভিযোগে শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।
ব্রিটেনের রাজনীতিতে টিউলিপ আর জায়গা পাবেন না- এটি নিশ্চিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও শেখ পরিবারের দৌরাত্ম্য চিরতরে শেষ হয়েছে বলা যায়। তবে আমরা জানি, বাংলাদেশ ব্রিটেন নয়।
শেখ হাসিনা ও টিউলিপের পরিণতি থেকে রাজনীতিক ও ক্ষমতাধরদের একটি শিক্ষা নেয়ার আছে। সেটি হলো, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। আর পাপ বাপকেও ছাড়ে না।


আরো সংবাদ



premium cement
আন্দোলনরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ছাত্রদলের নিন্দা ফের ইউরোপের মাঠে ফিরতে যাচ্ছে মেসি! জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় সম্মেলন বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাথে আপসের কোনো সুযোগ নেই : প্রেস সচিব গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল আমদানি খরচ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা খসড়া তালিকায় আল আমিন-জীবনরা এনআইডি সেবা হাতে রাখতে প্রধান উপদেষ্টা ও তিন মন্ত্রণালয়কে ইসির চিঠি বিশ্বকাপ খো খো : কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অগ্নি-প্রতিরোধ মহড়া ১৯ জানুয়ারি পাটগ্রামে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় মদের বোতল দিল বিএসএফ

সকল