০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬
`
অবৈধ দখলে রেলের বিপুল সম্পত্তি

উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেই

-

দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে যেখানে রাষ্ট্রীয় সম্পদ সংরক্ষণ করতে হয়, সেখানে উল্টো মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে হাসিনা জমানায় ইচ্ছমতো লুটপাট করা হয়েছে। নিকৃষ্ট এই নজির এ দেশের ইতিহাসের পাতায় কালো অধ্যায় হিসেবে চিত্রিত হবে, এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়। ক্ষমতায় আসার পর দলটির নেতাকর্মীরা সারা দেশে লুটপাটতন্ত্র কায়েম করেন। তাদের সহযোগিতায় ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্তব্যরত তাদের কিছু লোকজন।
সারা দেশে রেল মন্ত্রণালয়ের জমির পরিমাণ বিপুল। সেই সাথে এই মন্ত্রণালয়ের জমি বেদখল হওয়ার হারও অনেক। যে যার মতো প্রভাব খাটিয়ে রেলের সম্পত্তি দখল করে আছেন বছরের পর বছর। বিগত সরকারের দীর্ঘ দেড় দশকের শাসনামলে রেলের সম্পত্তি দখলে যেন মহোৎসব চলেছে। রেলের সম্পত্তি দখলের পর তা হাতবদল হয়েছে বহুবার। এ পক্ষত্রে সরকার ছিল নীরব। মন্ত্রীরা এসব দেখেও না দেখার ভান করেছেন। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
একটি সহযোগী জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দখলদারদের কব্জায় রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় ৯ হাজার একর সম্পত্তি। এর মধ্যে ঢাকাতে বেদখল শতাধিক একর। এই সম্পত্তির মধ্যে রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ১২টি মার্কেট স্থাপন করে ঢাকা সিটি করপোরেশন। পরে সিটি করপোরেশনের শীর্ষ ব্যক্তিসহ সম্পত্তি দেখভালে যুক্তদের সাথে আঁতাত করে এসব মার্কেট দখলে নেন দলীয় নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী কিছু ব্যবসায়ী।
রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে নিয়ে সিটি করপোরেশন মার্কেট করলেও তা এখন সংস্থাটির দখলে নেই। রাজনৈতিক প্রভাবে রেলের জমিতে বহুতল আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছেন দখলদাররা। এ দখলে জড়িত রয়েছেন রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা। বিনিময়ে কামিয়েছেন বিপুল অর্থ।
বিগত আওয়ামী জমানায় রেলের দুর্নীতির ‘কালো বিড়াল’ তাড়াতে এসে নিজেই দুর্নীতি করে ‘কলো বিড়াল’ বনে যান সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। কিন্তু তিনি রেল মন্ত্রণালয় থেকে সরে গেলেও মন্ত্রণালয়টি ডুবে ছিল আকণ্ঠ দুর্নীতিতে। বাস্তবে রেল মন্ত্রণালয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে।
সম্পত্তি বেদখল হওয়া নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: ফাহিমুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে অনেক জমি উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা ১২টি মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটের অনেকগুলো সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সব ক’টি রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা হবে।
একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, যা জুলাই বিপ্লব হিসেবে অভিহিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হয়েছে দেশের গণতন্ত্রহরণকারী ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকার।
গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বেদখল হয়ে থাকবে নাগরিকজীবনে সেটি দেখা বেদনাদায়ক। তাই রেলের বেদখল সম্পত্তি উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণের যে কথা রেল সচিব বলেছেন, তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই আমরা। সেই সাথে রেলের এসব সম্পত্তি দখলের পেছনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত তাদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি হওয়া প্রয়োজন, যাতে এসব দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। রেল বিভাগ দুর্নীতিমুক্ত হোক এটি জনপ্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement