০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`
কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুটের ঘটনা ধামাচাপা

গুরুত্বসহকারে তদন্ত হোক

-

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ সহজে লুটে নিয়ে চলে গেছে চোরেরা । কেন্দ্রীয় ব্যাংক এভাবে লোপাট হওয়ার ঘটনা দুনিয়ায় বিরল। এর চেয়েও বিস্ময়কর ছিল স্বয়ং সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তদন্ত করে আসল ঘটনা উদঘাটনে বাধা সৃষ্টি করছিলেন। ২০১৬ সালে বিপুল অর্থ বেহাত হওয়ার পরও এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হয়নি হাসিনা জমানায়। বলাবাহুল্য অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা ছিল দূরপরাহত। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুটের ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।
সহযোগী একটি দৈনিকের খবর, ব্যাংকের ভেতর থেকে যোগসাজশে অর্থ হাতিয়ে নিতে পেরেছে দুর্বৃত্তরা। সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল। রিজার্ভ সরানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয় ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ থেকে। এর সাথে যুক্ত হয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ও বাজেটিং বিভাগের কর্মকর্তারা। গোপন তথ্য তারা সাইবার অপরাধীদের হাতে তুলে দেন। ফরাসউদ্দিনের তদন্ত প্রতিবেদন ২০১৮ সালে করা হয়। ওই প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তবে এ ধরনের একটি গুরুতর অপরাধ তদন্ত করে খোলাসার বদলে ঘটনা শুরু থেকে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়।
প্রথমে গভর্নর ড. আতিউর রহমান এটিকে সাধারণ ছোটখাটো চুরির ঘটনার মতো গোপন রাখার কূটকৌশল অবলম্বন করেন। একটি সাধারণ ডায়েরি করতেও বাধা দেন। ফিলিপাইনের মিডিয়া থেকে এ কেলেঙ্কারির ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারেন। এছাড়া তিনি ভারতীয় একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার পরামর্শে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় সহায়তায় রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছিল। দেশী-বিদেশী তদন্ত এবং হাসিনা সরকারের অপতৎপরতা থেকে সন্দেহ আরো বদ্ধমূল হয়, সরকারের একটি অংশ এর সাথে জড়িত। অব্যাহতভাবে তদন্তকাজে বাধা দিয়েছে সরকার। তদন্তের নামে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা দেখা গেছে। ওই সময় এ ব্যাপারে তথ্য দেয়ায় তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহাকে গুম করা হয়েছিল। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন। জোহা প্রথম বলেছিলেন, ব্যাংকের ভেতরের সাহায্য ছাড়া রিজার্ভ থেকে টাকা সরানো সম্ভব নয়। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ তছরুপ নিয়ে কেউ সাহস করে আর কথা বলেননি। আতিউর রহমানসহ কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও দেখা যায়নি। এ নিয়ে মাফিয়া হাসিনা সরকারের আর কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।
দেশের অর্থব্যবস্থার রক্ষক বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই যখন লুটের শিকার হয়; আর এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। তখন দেশের ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক খাতে লুটপাটের যে মহামারী চলছিল তা ঠেকানোর অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছিল না। আমাদের আর্থিক ব্যবস্থায় যে ধস নেমেছে সেটাকে সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুটের ঘটনার সঠিক তদন্ত হতে হবে। এর সুষ্ঠু তদন্ত অসম্ভব নয়। এ ঘটনার সত্য উদঘাটনে দ্রুত শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়া হোক। আগের তদন্ত প্রতিবেদন এবং সরকারের লুকোচুরির অপচেষ্টার মধ্যে ঘটনার ক্লু লুকিয়ে রয়েছে। আন্তরিক চেষ্টা নিয়ে নতুন তদন্ত হলে নেপথ্যের সব বেরিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল