০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১, ৩ রজব ১৪৪৬
`
স্বাগত নববর্ষ ২০২৫

নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা

-


মুক্তির নতুন আনন্দ নিয়ে শুরু হলো ইংরেজি ২০২৫ সাল। এক পৈশাচিক দানবীয় শাসনের কাছে বাংলাদেশের মানুষ বন্দী ছিল সাড়ে ১৫ বছর। ছাত্র-জনতা এক অভাবনীয় অভ্যুত্থান স্বৈরাচারের লৌহ-শৃঙ্খল গুঁড়িয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। তবে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ গভীর ক্ষত রেখে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় পদে পদে কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ত হচ্ছে। আশা করা যায়, নতুন বছরে সব অন্ধকার দূর করে আশাবাদের আলোয় উজ্জ্বল হবে জাতির আঙ্গিনা।

২০২৪ সাল চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে শুরু হয়। জালিম হাসিনা বছরের শুরুতে আরো এক প্রহসনের নির্বাচন করে। জাতির ইতিহাসে এটি ডামি নির্বাচন নামে কুখ্যাত হয়। গুম খুন বৃদ্ধি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরো সঙ্কুচিত হওয়ার আশঙ্কায় পুরো জাতি মুষড়ে পড়েছিল। বছরের মাঝামাঝিতে মহান আল্লাহ যেন এই দেশের মানুষের প্রতি রহমতের দৃষ্টি ফেরালেন। কোটা নিয়ে জাতিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে গিয়ে পুরো জাতির রোষের মুখে পড়ে হাসিনা। অলৌকিক আগমন ঘটে প্রতিবাদী এক তরুণ সম্প্রদায়ের। এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক দলগুলোকে সামরিক কায়দায় অস্ত্রের মুখে দমন করা হলেও নবাগত ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে এবার হাসিনা দানব খড়কুটোর মতো উড়ে যায়। তবে দেশবাসীকে এর চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। দুই হাজার মানুষের প্রাণহানি ও ৩০ হাজার মানুষের আহত হয়েছে খুনে বাহিনীর আক্রমণে। ২০২৪ চরম হতাশা নিয়ে শুরু হলেও ৫ আগস্ট জাতি নতুন বিজয় অর্জন করে। হায়েনারা পরাস্ত হয়েছে শুধু নয়, দেশ ছেড়ে যে যেভাবে পেরেছে পালিয়ে গেছে।

নতুন বছরে জাতির সামনে বড় বড় চ্যালেঞ্জ হাজির হয়েছে। একদিকে ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করাতে হবে, অপর দিকে খুনি লুটপাটকারী অপরাধী চক্রের বিচার সম্পন্ন করা। অনেকটাই একেবারে স্বাধীন একটি দেশকে নতুন করে নির্মাণের মতোই। বরং এতে জটিলতা আরো বেশি। কারণ ফ্যাসিবাদী শক্তি এখনো দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগে অটুট রয়েছে। এ অবস্থায় অপরাধী চক্রকে বিচারের মুখোমুখি করা দুরূহ ব্যাপার। ৫ মে শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মতো বড় বড় পৈশাচিকতা চালিয়েছে দেশে। এগুলোকে আলাদা করে বিচার করতে হবে।
লুটপাট করে সরকারি কোষাগার শূন্য করে দেয়ার যে নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে তা পড়তে শুরু করেছে। দেউলিয়া সরকারি প্রতিষ্ঠান রক্ষা করার পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী সরকারের করে যাওয়া বাড়তি ঋণের বোঝাও চেপে বসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কঠিন একটি কাজ। ২০২৫ সালে এই সরকারকে জনগণকে সাথে নিয়ে এই কঠিন অবস্থার মোকাবেলা করতে হবে। বাড়তি ঝামেলা হিসেবে যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। নিম্ন আয়ের মানুষ প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। এই বছরে এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে।
মানুষ নতুন আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জনআশার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। এ জন্য দরকার জুলাই বিপ্লবের মতো নতুন বছরে সর্বস্তরের মানুষের ঐক্য, জাতীয় ঐক্য। তা হলেই জাতি নতুন বছরে এক নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement