০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১, ৩ রজব ১৪৪৬
`
চাকরিহারা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের বিক্ষোভ

সমস্যার দ্রুত সমাধান করুন

-


আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা গত রোববার বিক্ষোভ করেছেন। চাকরিচ্যুত সশস্ত্রবাহিনী সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম ‘সহযোদ্ধা’র ব্যানারে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ জাহাঙ্গীর গেটের সামনে এ বিক্ষোভকালে তারা তিন দফা দাবি জানান।
তাদের দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। তারা যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের অন্যায়-অবিচারের শিকার তাতে সন্দেহ নেই। সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর হিসেবে কাজ করেছেন এবং সরকারের অনুগত নয় বলে মনে করা হয়েছে, সশস্ত্রবাহিনীর এমন শত শত সদস্যকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাকরিচ্যুত বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কাউকে আয়নাঘরে বন্দী করে অমানবিক নির্যাতনও করা হয়। ব্রিগেডিয়ার আমান আযমীর চাকরিচ্যুতি ও নিপীড়নের ঘটনা সবার জানা। কিন্তু এমন শত শত ঘটনা জনগণের অজ্ঞাত রয়ে গেছে। আমান আযমীর চাকরিচ্যুতির আদেশ সম্প্রতি বাতিল হয়েছে। তার প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাও হচ্ছে। এটি আশাব্যঞ্জক।

পতিত স্বৈরাচারের সময় যেসব অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য ছিল তার অবসানই ছিল চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্য। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দেশের সব বঞ্চিত মানুষ তাদের হৃত অধিকার ফিরে পাবেন, বঞ্চনা ও পীড়নের অবসান ঘটবে- এটিই ছিল প্রত্যাশিত। তার কিছু বাস্তবে ঘটছেও। অনেক রাজনীতিকের বানোয়াট মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। অনেকের শাস্তি বাতিল ঘোষণা হয়েছে। প্রশাসনে যারা বৈষম্য, অবিচারের শিকার হয়েছেন তাদেরও বঞ্চনার অবসান ঘটানো হচ্ছে পর্যায়ক্রমে। কিন্তু সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে কেন গত পাঁচ মাসেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তা বোধগম্য নয়।

চাকরি হারানো সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা গত ১৫ সেপ্টেম্বর চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। তারা দাবি করেন, গত ১৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে সরকারের ‘রোষানলে পড়ে’ তারা চাকরি হারিয়েছেন। এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচিও পালন করেন তারা। স্মারকলিপি দেয়া সবচেয়ে শোভন ও স্বাভাবিক একটি কর্মসূচি। কিন্তু সশস্ত্রবাহিনীর সাবেক সদস্যরা রাজপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে বাধ্য হচ্ছেন এটি কতটুকু শোভন, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাদের বঞ্চনা, চাকরিচ্যুতি বা যেকোনোভাবে নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনাগুলো যাচাই করে দেখার দরকার থাকলে তা দেখা যেতে পারে। কিন্তু বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা কোনোভাবে কাম্য নয়।
তারা যেসব দাবি জানিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে- চাকরি হারানো সদস্যদের চাকরিচ্যুতির সময় থেকে বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল; সে সুযোগ না থাকলে প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পেনশনের আওতায় আনা। এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তারা দাবির আওতায় এনেছেন। সেটি হলো, যে আইনি কাঠামো ও বিচারব্যবস্থায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তার সংস্কার।
আমরা মনে করি, অধিকতর কর্মীবান্ধব করতে সশস্ত্রবাহিনীর নিজস্ব আইন সংস্কারের মাধ্যমে যুগোপযোগী করার দরকার আছে। কারণ, তাতে ফ্যাসিবাদী সরকার সুবিধামতো বহু অন্যায্য পরিবর্তন এনেছে।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement