০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১, ৩ রজব ১৪৪৬
`
বছরের শুরুতে বই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা

জটিলতা দ্রুত নিরসন করুন

-


পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছে সবকিছুই ছিল বাণিজ্যপণ্য। শুধু বাণিজ্য হলেও দেশ কিছুটা রক্ষা পেত। দেশের সব সেবা খাতকে তারা বানিয়েছিল অবৈধ অর্থ কামাইয়ের উৎস। তাদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও বিতরণ ছিল স্রেফ একটি মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দী। তাদের কৃত অনিয়ম দুর্নীতির পরিণতি থেকে বেরিয়ে আসা এখনো বড় কঠিন। অন্তর্বর্তী সরকার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, ছাপা ও বিতরণ করতে গিয়ে এখন রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ছাত্রদের হাতে বই সরবরাহ করা তাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
বছরের একেবারে শেষপ্রান্তে এসে জানা যাচ্ছে, খুব সামান্য সংখ্যক বই ছাপার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের জন্য নতুন বছরে ৪০ কোটি নতুন বই প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিতরণের জন্য মাত্র পাঁচ কোটিরও কম বই প্রস্তুত রয়েছে। শ্রেণীভিত্তিক কিছু বইকে অগ্রাধিকার দিয়ে ছাপানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। যেমন প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর জন্য বাংলা ইংরেজি ও গণিত বই। একইভাবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্তও কিছু বই বাছাই করে সময়মতো পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর সব বই বছরের প্রথম দিন সরবরাহ করার উদ্যোগ ছিল। বাস্তবে ছাত্রদের কাছে খুব কমসংখ্যক বই পৌঁছাতে পারছে কর্তৃপক্ষ।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন নিয়ে বেকায়দায় পড়ে। এমন সব বিষয় পাঠ্য হিসেবে ঢোকানো হয়েছে সেটি পরিবর্তন করা অপরিহার্য ছিল। এছাড়া প্রতিটি বই ছিল ভুল ও আপত্তিকর বিষয়ে ভরা। এগুলো পরিমার্জন, সংশোধন নিয়েও নানা বিপত্তিতে পড়ে সরকার। নতুন পাণ্ডুলিপি তৈরি করে সেগুলো ছাপার উপযুক্ত করতে অনেক সময় লেগেছে। বিগত সরকার দেশের ছাপাখানাগুলোকে বঞ্চিত করে ভারত থেকে বই ছাপিয়ে আনত। ভারতকে সুবিধা দেয়ার জন্যই তারা এটি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশীয় ছাপাখানায় বই ছাপাচ্ছে। তবে নতুন সিস্টেম তৈরি করতে গিয়ে বিলম্ব হয়েছে। এমনকি কিছু বইয়ের ক্ষেত্রে মুদ্রাকরদের সাথে এখনো চুক্তিই সই করা যায়নি। বিগত সরকার লুটপাটের সুবিধার্থে বছরের শুরুতে বই উৎসবের নামে পার্টি করত। আয়োজন করত নানা ধরনের অনুষ্ঠানের। হল ভাড়াসহ নানা ধরনের খাত দেখিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।

প্রাইমারি ও মাধ্যমিকের ছাত্রদের বছরের শুরুতে নতুন বই সরবরাহ করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের এই বছরটি কোনোভাবেই স্বাভাবিক সময় নয়। তাই এই বছরে ছাত্ররা কিছুটা বিলম্বে বই পেলেও হয়তো সবাই মেনে নেবে। তবে সামনের বছরগুলোতে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে হবে। ১ জানুয়ারি সবার জন্য সবকটি বই হাজির রাখতে হবে। সে জন্য সারা বছর কাজ করতে হবে। নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, সেগুলো পরিমার্জন, ছাপাখানা নির্ধারণ সময়মতো করে নিতে হবে। আগামী বছর এ ব্যাপারে কোনো ধরনের বিলম্ব কিংবা ত্রুটি বিচ্যুতি মেনে নেয়া যাবে না। আমরা আশা রাখব, পাঠ্যপুস্তক কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আমলে নেবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement