০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১, ৩ রজব ১৪৪৬
`
ভক্ষকের সহযোগী ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

জড়িতদের কোনো ছাড় নয়

-


দেশের অর্থব্যবস্থার মূল অভিভাবক কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব ধরনের আর্থিক ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবসময় প্রতিষ্ঠানটির সচেষ্ট থাকার কথা। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুটেরাদের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সংস্থাটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা গভর্নরের হাতে। হাসিনা সরকার গভর্নর হিসেবে পরপর নিয়োগ দিয়ে গেছে মাফিয়া গোষ্ঠীর অনুচরদের। এরা রাষ্ট্রীয় আমানত রক্ষার বদলে শীর্ষপদে থেকে চক্রান্ত করেছেন কিভাবে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ লুটেরাদের হাতে তুলে দেয়া যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হাসিনা ঠাণ্ডা মাথায় এই রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম শুরু করেন। ফলে তার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাংক খাত ধসে গেছে। অন্য সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও একই অবস্থা হয়েছে।

লুটপাটের শুরুটা আতিউর রহমানকে গভর্নর নিয়োগের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষের গচ্ছিত অর্থ নিরাপদ রাখার বদলে শুরু হয় সেগুলো লুটেপুটে খাওয়ার ষড়যন্ত্র। এই গভর্নর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থও সুরক্ষিত রাখতে পারেননি। এরপরে আরো দু’জন গভর্নর এ মাফিয়াচক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। হাসিনা সরকার এদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ঋণ পুনর্গঠনের অবাধ সুবিধা করে দেয়। আওয়ামী লীগ নেতারা একে একে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন পান। ব্যাংক খাতে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেঙ্কারী প্রথম বড় লুটপাট। আর্থিক খাতের এতবড় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এরপর এর চেয়ে বড় বড় লুটের ঘটনা ঘটতে থাকে। যা ছড়িয়ে পড়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও। শেষ পর্যন্ত একজন মাফিয়াই একটিমাত্র বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি লুটে নিয়েছে।

অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও লুটপাটের সংস্কৃতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। বীমা ও লিজিং কোম্পানিসহ সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানতকারীর গচ্ছিত অর্থ লুটে নেয়া হয়। ব্যাংকের মতো এসব প্রতিষ্ঠানও এখন গ্রাহকদের বিভিন্ন মেয়াদি আমানত পরিশোধ করতে পারছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান বড় ঝুঁকিতে পড়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পিকে হালদার একাই দশ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। ভারতের কারগারে আটক এ ব্যাক্তি ইতেমাধ্যে ছাড়া পেয়েছে।
মাফিয়া সরকারের অন্যতম দোসর সালমান এফ রহমান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যোগসাজশে ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা আদায় করে নেন। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোসহ দেশের বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী ঋণের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা লুটে নেয়। অর্ন্তবর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ছয় লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। মাফিয়া সরকারের শেষ সময়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। গভর্নর ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার স্রেফ মাফিয়াচক্রকে জনগণের অর্থ লুটে নেয়ার বরকন্দাজ হিসেবে নিযুক্তি পান। তারা এ দুষ্কর্ম সফলভাবে বাস্তবায়ন করেন।
রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে বসে জনগণের সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা যারা করেছেন; তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত আর্থিক অনিয়মের সাথে জড়িত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এসব গভর্নরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যাতে করে সবার কাছে এই বার্তা পেঁছে যে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement