প্রতিবেশীদের উদ্বেগ উপেক্ষা নয়
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে তিব্বতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করবে চীন। এ বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে দিল্লি ও ঢাকা কিছু জানে না। অথচ এটি চীন-ভারত-বাংলাদেশ এই তিন দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত একটি আন্তঃদেশীয় নদী। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিতব্য বাঁধে তিব্বতের প্রকল্পে কত মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে আর এটি স্থানীয় আবাসকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করবে- এ নিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য-উপাত্ত জানায়নি অন্য দুই দেশকে।
বেইজিংয়ের জন্য বাঁধটি লাভজনক হলেও চীন-ভারত-বাংলাদেশ, তিন দেশের প্রাণ-প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। প্রকল্পটি স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র ও নদীর নিম্নধারে পানির প্রবাহ ও পথ পরিবর্তন করতে পারে। সঙ্গত কারণে দিল্লি ও ঢাকা বাঁধটি নির্মাণে উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে চীনা কর্মকর্তাদের দাবি, তিব্বতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পরিবেশ বা নদীর নিম্নপ্রবাহে পানি সরবরাহের ওপর বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত জলবিদ্যুৎ কোম্পানি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়নার দেয়া হিসাব অনুযায়ী, এ বাঁধ থেকে প্রতি বছর ৩০ হাজার কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ চীনের মধ্য অঞ্চলে অবস্থিত থ্রি গর্জেস ড্যাম। নতুন এই বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থ্রি গর্জেস ড্যামের চেয়ে তিনগুণের বেশি।
ইয়ারলুং সাংপো নদীর উৎপত্তি গলিত হিমবাহ ও পাহাড়ি ঝরনা থেকে। এটি চীনের তিব্বত থেকে ভারতের অরুনাচল-আসাম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতে নদীটি ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। এই নদীতে চীনা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভাটির দেশ ভারত ও বাংলাদেশের কিছু নদী এবং কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করেছেন, বাংলাদেশের সাথে কোনো পরামর্শ ছাড়া ব্রহ্মপুত্রে চীনের বাঁধ নির্মাণ এ দেশের জন্য বিপর্যয়কর এবং জীববৈচিত্র্যে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে পাওয়া পানির ৬০ শতাংশ আসে ব্রহ্মপুত্র থেকে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জংবো নদীর পানি প্রত্যাহার করা হলে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ আটকিয়ে যেকোনো দেশ বড় অবকাঠামো বানালে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ, এটি ধরে নেয়া যায়। যেমন- পদ্মায় গঙ্গা বাঁধের কারণে বাংলাদেশ ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবেলা করছে। তিস্তার গজলডোবায় ভারত বাঁধ নির্মাণ করায় পানি বঞ্চনার দুঃখ বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে ভোগাচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করে যাচ্ছে চীন। যা বাংলাদেশের পুরো পরিবেশ বিশেষ করে কৃষির ওপর যা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ভারতের ফারাক্কা বাঁধে পদ্মা নদী শীর্ণ হয়ে গেছে। তিস্তার অবস্থাও একই রকম। ব্রহ্মপুত্রে এবার বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাঁধ নির্মিত হলে এই নদী বাংলাদেশ অংশে মরণদশায় পতিত হবে।
ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ-ভারতের কোটি কোটি মানুষের ওপর এবং এ অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতিতে তিব্বতের এ বাঁধ বিরূপ প্রভাব ফেলবে, এ আশঙ্কাকে হালকাভাবে দেখার বিষয় নয়। তাই এই বাঁধের নির্মাণকাজ শুরুর আগে চীনের উচিত সব অংশীজনকে নিয়ে একটি যৌথ সমীক্ষা করা। কারণ আন্তঃদেশীয় কোনো নদী একক কোনো দেশের সম্পদ নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা