বিকল্প সমাধানে জোর দিতে হবে
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল যে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে সেটি নিশ্চিত। গত মঙ্গলবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক বোতল থেকে নির্গত বিসফেনল এ (বিপিএ)-এর মতো রাসায়নিক শরীরের হরমোন সিস্টেমে বিঘ্ন এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যান্সারের আশঙ্কা তৈরি করে। গবেষণার তথ্যমতে, দেশের ১৫ কোটির বেশি মানুষ প্রতিনিয়ত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের দ্রুত নগরায়ন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলকে নীরব ঘাতকে পরিণত করেছে। অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিক বর্জ্যরে প্রভাব স্পষ্ট। শহরে জলাবদ্ধতা, দূষিত জলপথও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। বঙ্গোপসাগর মাইক্রোপ্লাস্টিকের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ফেলে দেয়া বোতলে শহরের ড্রেনেজব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের বিসফেনল এ (বিপিএ) এবং ফবালেটস মাটি, পানি ও বায়ুতে মিশে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করছে এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি করছে। এটি অব্যাহত থাকলে পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটতে পারে।
গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ ছয়ে। প্রথমে রয়েছে ভারত, যারা বছরে ৯৩ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য অবমুক্ত করে। লিডসের গবেষণা মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৭ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি হয়।
গত আগস্টে আমাদের পরিবেশ মন্ত্রণালয় ১৭ ধরনের বস্তু, সামগ্রী, পদার্থকে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ হিসেবে নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। যার মধ্যে প্লাস্টিকের বোতলসহ রয়েছে- বেলুন, আইসক্রিম বা ললিপপের সাথে ব্যবহার করা প্লাস্টিকের কাঠি বা লাঠি, পাতলা প্লাস্টিকের আবরণযুক্ত ফাস্টফুডের মোড়ক, প্লাস্টিকের দাওয়াতপত্র, প্রচারসামগ্রীর ওপর ব্যবহার করা থার্মাল লেমিনেশন, পাতলা প্লাস্টিকের আবরণযুক্ত সিগারেটের প্যাকেট, টয়লেট রোল, সাবানের মোড়ক, মেলামাইন ফোম স্পঞ্জ, সিগারেটের ফিল্টার প্রভৃৃতি। এরপর পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং আওতাধীন দফতর ও সংস্থার কার্যালয়ে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। একই সাথে সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প পণ্য ব্যবহারের পথও বাতলে দেয়া হয়।
এর পাশাপাশি অন্য একটি দিকও রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ১৭টি প্লাস্টিকের পণ্যের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা জারির পর এ খাতের ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করে পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্য বন্ধে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ অ্যাসেম্বলির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সময় চেয়েছেন তারা। সরকারের ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এ আইনের কারণে শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এবং বাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু জীবনের চেয়ে পণ্যের বাজারের দাম বেশি হতে পারে না। যেসব দ্রব্য আমাদের জীবনহানির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেগুলোর বিপণন বন্ধ হওয়া উচিত। প্লাস্টিকের বিকল্প দ্রব্য উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজার চাহিদা সৃষ্টি করা সময়সাপেক্ষ হলেও অসম্ভব নয়। জীবনের প্রয়োজনে, স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করতে আমাদের প্লাস্টিকের বোতলসহ সরকার নির্দেশিত প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি ব্যবহার বাদ দিয়ে বিকল্প দ্রব্য ব্যবহার করা উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা