২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
হাসিনা-জয়ের দুর্নীতির তদন্ত শুরু

বিচার নিশ্চিত করতে হবে

-


পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দুর্নীতি, অর্থ পাচারের তদন্ত শুরু হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছেন।
এর আগে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারের বিরুদ্ধে ৯টি প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করেছিল দুদক। ওই টিম ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের তদন্ত করছে।

শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয়ের দুর্নীতি, অর্থ লুটপাট ও পাচারের তথ্য গত ১৫ বছরে দেশবাসীর মোটেও অজানা ছিল না। তারা যে লুটপাট করে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছেন সে তথ্য নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। দেশের পত্রপত্রিকা এ বিষয়ে নীরব থাকলেও বাইরের দেশে অবস্থান করে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী সামাজিকমাধ্যম ও ভিডিও প্ল্যাটফর্মে এ বিষয়ে তথ্যবহুল পোস্ট দিয়েছেন। সেগুলো সচেতন দেশবাসীর নজর এড়ায়নি। দেশের রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম বা অন্য কারো পক্ষে এ নিয়ে সোচ্চার হওয়া সম্ভব ছিল না। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার জনগণের শ্বাসরোধ করেছিল। বহু মানুষকে শুধু ভিন্নমত প্রকাশের কারণে জীবন দিতে হয়েছে। দুর্নীতির বিষয়ে টুঁ শব্দ করলেও মৃত্যু ছিল অবধারিত।

কিন্তু বিশ্বে কোনো স্বৈরাচার চিরস্থায়ী হয় না। বাংলাদেশেও হয়নি। হাসিনার সরকার চরম দমন-পীড়নের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলো নিশ্চিহ্ন করে, সুশীল সমাজকে অকার্যকর করে, পুলিশ প্রশাসন এমনকি আইন-আদালতসহ মানুষের শেষ আশ্রয়ের জায়গাটুকুও দলীয়করণ করে। নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করে। আর এসবই তারা করে শুধু ক্ষমতায় থেকে অর্থ লুটপাটের উদ্দেশ্যে। রাষ্ট্র পরিচালনা বা দেশের উন্নয়ন যে তাদের উদ্দেশ্য ছিল না সেটি গত ১৫ বছরের কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট। এমন একটিও প্রকল্প তারা নেননি যেটি যৌক্তিক ব্যয় ও সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ছোট-বড় সব প্রকল্প ছিল স্বাভাবিক ব্যয়ের চেয়ে বহুগুণ বেশি ব্যয়সাপেক্ষ। বারবার সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে শুধু অর্থ নয়ছয় করার উদ্দেশ্যে।

শেষ পর্যন্ত ত্যক্তবিরক্ত মানুষ মরিয়া হয়ে আঘাত হেনেছেন স্বৈরাচারের গদিতে। ছাত্র-জনতার অভাবিতপূর্ব বিপ্লবে ধরাশায়ী হয়েছে ফ্যাসিবাদী শাসন। হাসিনা পালিয়ে রক্ষা পেয়েছেন। এখন তার সমস্ত অপকর্মের আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার হবে।
কিন্তু হাসিনা ও তার সুবিধাভোগীদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তারা দেশে নানাভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। গুপ্ত হত্যার মতো নাশকতাও শুরু করেছে। জুলাই বিপ্লবের পক্ষের কিছু মহলও ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে এমন কিছু কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে যা গোটা বিপ্লবের স্পিরিটকে হতমান করে তুলেছে। এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, স্বৈরাচারী শাসকের যাবতীয় অন্যায় অপকর্ম, দুর্নীতি, গুম, খুন এমনকি প্রকাশ্য গণহত্যার মতো অপরাধেরও বিচার আদৌ সম্পন্ন করা যাবে কি না জনমনে এমন প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
কিন্তু এত বড় অপরাধী কোনো কারণে ছাড় পেয়ে গেলে তা হবে জাতির জন্য আত্মঘাতী। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement