চাই ইনসাফভিত্তিক সংস্কার
- ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সমকালীন রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র অত্যন্ত জরুরি একটি অঙ্গ। যা জনপ্রশাসন হিসেবে পরিচিত। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনপ্রশাসনের কাজই হলো নাগরিক সেবা প্রদান করা। বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাদেরসহ পরিবারের পোষ্যদের ভরণপোষণে নানাবিধ সুবিধাসহ বেতনভাতা দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে জনপ্রশাসন ঔপনিবেশিক আমলের হওয়া তা এখনো জনবান্ধব হতে উঠতে পারেনি। ফলে জনপ্রশাসন নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজমান। এই অসন্তোষ প্রশমিত করতে জুলাই বিপ্লবের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনপ্রশাসন সংস্কারে একটি কমিশন গঠন করেছে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, সরকার তা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কমিশন কাজ শুরুর পর থেকে জনপ্রশাসনে কর্মরত আন্তঃক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে বিরোধ। তা এখন দৃশ্যমান। অথচ কমিশন গঠন করা হয়েছে প্রশাসনকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায় সেই লক্ষ্যে।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, বিসিএস প্রশাসন এবং অন্যান্য ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্যে উপসচিব পদে পদোন্নতিসহ কিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিরোধ দীর্ঘ দিনের। গত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছেন, পরীক্ষা ছাড়া সিভিল সার্ভিসের উপসচিব এবং যুগ্মসচিব পর্যায়ে কেউ পদোন্নতি পাবেন না বলে সুপারিশ করা হবে। একই সাথে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নেয়ার সুপারিশ করা হবে। সংস্কার কমিশনের প্রধানের এমন বক্তব্যের পর থেকে বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। প্রশাসন ও অন্যান্য কাডারের কর্মকর্তারা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলেছেন, উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিবসহ উচ্চ পদে শুধু তাদের পদোন্নতি দিতে হবে, অন্য কোনো ক্যাডারকে নয়। অন্য দিকে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে লিখিত পরীক্ষা নেয়া এবং ৫০ শতাংশ আনুপাতিক হার নির্ধারণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ ছাড়াও তারা যেসব বিষয়ে বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ করছেন তার মধ্যে রয়েছে, গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি, ডিসি (জেলা প্রশাসক) পদায়ন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা, গাড়ি ঋণ, বিদেশ ভ্রমণ প্রভৃতি।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) যখন পরীক্ষার মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করে তখন উত্তীর্ণরা কোন ক্যাডারে কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন তা সম্পূর্ণ জেনেবুঝে চাকরিতে যোগ দেন। এরপর সুযোগ-সুবিধা দাবি করা কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজ নয়। সংস্কার কমিশনের কাজ জনসেবার মান কিভাবে আরো ভালো করা যায় তা দেখা। জনস্বার্থ সমুন্নত রাখা ও প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনার সুপারিশ করা।
আমাদের দেশে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে থেকে জনগণ কাক্সিক্ষত মানের সেবা পান না। জনগণের সাথে তাদের আচরণ প্রভুসুলভ রয়ে গেছে। সেবা পেতে অনেক ক্ষেত্রে ঘুষ দিতে হয়। তাই জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে এসব বিষয়ের সুরা হয় বাস্তবভিত্তিক সুপারিশ করতে হবে। বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে হুটহাট কোনো পরিবর্তন আনা সমীচীন হবে না। জনপ্রশাসনে ইনসাফভিত্তিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি, যাতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর হয় এবং জনপ্রশাসন থেকে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা