জনগণের পক্ষে ঐতিহাসিক রায়
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করেছেন উচ্চ আদালত। আওয়ামী লীগ সরকার ওই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে। আদালত সংশোধনীর দু’টি ধারা, ২০ ও ২১ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে তা বাতিল করেছেন। সেই সাথে আইনের আরো চারটি ধারা বাতিল করেছেন। পাশাপাশি সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে জনগণের মতামত নেয়ার বিধান অর্থাৎ গণভোটের ব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছেন।
আদালত বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারার মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়। ধারা দু’টি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো তথা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। কারণ জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজন করা হয়েছিল। আদালত বলেছেন, সংবিধানের বেসিক ডকট্রিন বলে একটি বিষয় আছে যেগুলো পার্লামেন্ট চাইলেও সংশোধন করতে পারবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটিই করেছে।
আদালত বলেছেন, গণতন্ত্র আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। গণতন্ত্র বিকশিত হয় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি। যার ফলে হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান।
ঐতিহাসিক এ রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে এলো। জনগণ আবার তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পাচ্ছেন।
আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সংবিধানকে মূলত দলীয়করণ করা হয়। আওয়ামী লীগকে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় রাখা এবং শেখ হাসিনাকে চিরস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী রাখার জন্যই ছিল এই সংশোধনী।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা হয়। এর আগে ২০১০ সালের ২১ জুলাই সংবিধান সংশোধন বিষয়ে ১৫ সদস্যের বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। কমিটি রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার যেসব ব্যক্তির সাথে বৈঠক করে তাদের বেশির ভাগই কিছু সংস্কারসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল কমিটির ২০তম বিশেষ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যবস্থা বহাল রেখে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেন। কিন্তু পরে সে অবস্থান থেকে সরে আসেন। ৩০ জুন ২০১১ পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়।
এই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা ধ্বংস করে আওয়ামী লীগ। মূলত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত পাঁচ বছর এবং ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর- এই মোট ২০ বছরে তার ফ্যাসিবাদী শাসন চিরস্থায়ী করতে যা কিছু অন্যায় অপকর্ম করেছে তার মধ্যে এই সংশোধনী ছিল সবচেয়ে বড় অপকর্ম।
পঞ্চদশ সংশোধনীকে অনেক বিশেষজ্ঞ ‘অসাংবিধানিক সংবিধান সংশোধন’ বলে অভিহিত করেন। আদালতে এটি চ্যালেঞ্জ করার কথাও বলেন অনেকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সময় ‘শপথধারী রাজনীতিক’ নামে পরিচয় দেয়া দলীয় বিচারকদের আদালতে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ আদৌ ছিল না। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর পঞ্চদশ সংশোধনী আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়।
আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্র ধ্বংস করে। স্বাভাবিক উপায়ে ক্ষমতার পালাবদলের সব পথ তারা রুদ্ধ করে। এটি প্রমাণিত। আবার পরবর্তী সরকারগুলো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনলে সেই সুযোগে তারা দেশকে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় ওলটপালট করে দেন। লুটপাট করে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেন। এই ধারা চিরকাল চলতে পারে না। গত ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের বিচার এই মুহূর্তে দেশের স্থিতির জন্যই সবচেয়ে জরুরি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা