১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বাগেরহাটে ভুয়া এনজিও

ব্যুরো কী করে

-


দৈনিক নয়া দিগন্তের বাগেরহাট প্রতিনিধি ও চিতলমারী সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। মালিক বাবা-ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চার শতাধিক বিনিয়োগকারী। টাকা ফেরত পেতে তারা আইনগত সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে। মানববন্ধন, মিছিল ও সমাবেশও করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। উপজেলা প্রশাসন বলছে, অনিবন্ধিত এ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের হালিশহর গ্রামের আনন্দ মোহন বিশ্বাস ২৪ বছর আগে স্থানীয় কৃষকদের ঋণ দেয়ার জন্য রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ঋণ দেয়ার পাশাপাশি নিজ গ্রাম ও পাশের উপজেলা চিতলমারীর কৃষকদের কাছ থেকে এক লাখ টাকায় মাসে এক হাজার ২০০ টাকা সুদ দেয়ার শর্তে বিনিয়োগ গ্রহণ করতে থাকেন। কিছু দিন পর নিজেকে নির্বাহী পরিচালক ও ছেলে প্রবীর বিশ্বাসকে পরিচালক করে প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী এনজিওর মতো স্থানীয়দের কাছ থেকে বিপুল বিনিয়োগ গ্রহণ করেন। বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি অফিস এবং বিনিয়োগ সংগ্রহের জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ করেন তারা। বিপুল বিনিয়োগ গ্রহণ করলেও প্রতিষ্ঠানটির সরকারি অনুমোদন নেই। শুধু সার-কীটনাশক বিক্রির ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিলেন তারা।
ধর্মগুরু বিজয় গোঁসাইয়ের ছেলে হওয়ায় স্থানীয়রাও সরল বিশ্বাসে নিজেদের জমানো টাকা ব্যাংকে না রেখে রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজে রাখেন। কিন্তু প্রায় ১০ মাস আগে প্রতিষ্ঠানের অফিসে তালা দিয়ে পালিয়েছেন বাবা-ছেলে ও মাঠকর্মীরা। হালিশহর গ্রামে বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না রেনেসাঁর মালিকদের। কষ্টের টাকা হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। আনন্দ মোহন বিশ্বাস ও তার ছেলে প্রবীর বিশ্বাস তারককে আটক করে প্রতারণার শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি টাকা ফেরত চান গ্রাহকরা।

ভুক্তভোগী কাননচক গ্রামের হাসি রায় বলেন, ‘আমি বিধবা নারী। ছয় বছরে ডাবল দেয়া স্কিমে দুই লাখ টাকা, মেয়ে নীপা রায়ের নামে সাড়ে আট হাজার ৫০০ ও ছেলে সুজন রায়ের নামে আট হাজার ৫০০ টাকা জমা রাখি। এখন দেখি অফিসে তালা।
রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করা সুধাংশু শেখর সদাই ও প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছি। মালিকপক্ষ গা ঢাকা দিয়েছে। গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা ফেরত না দেয়ায় আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।’
স্থানীয়রা বলছে, আনন্দ মোহন বিশ্বাস, স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের স্ত্রীকে নিয়ে খুলনায় অবস্থান করছেন। সুযোগ বুঝে ভারতে পালিয়ে যাবেন।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাপস পাল বলেন, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরকার এনজিওগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে। কথা হলো- সরকার যদি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে থাকে, তাহলে এনজিও ব্যুরোকে সক্রিয় করতে হয়। তখন কোনো ভুয়া এনজিও ঠাঁই পেতে পারে না। কিন্তু বাগেরহাটে অন্যরকম হয়েছে। অর্থাৎ এনজিও ব্যুরো ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি এবং সেই ফাঁকে ভুয়া এনজিও মানুষকে প্রতারিত করেছে। এরকম ঘটনা দেশে ঘন ঘন ঘটছে। সরকারকে এ দিকে নজর দেয়া দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement