১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

গণতান্ত্রিক চেতনায় দেশ নির্মাণ করি

-


জাতির সবচেয়ে অগ্রসর মানুষ দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রগঠনে আমাদের বুদ্ধিজীবী শ্রেণী প্রধান ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতার জন্য তাদের অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। বছর ঘুরে আজও আবার এসেছে জাতির জন্য সেই বেদনাবিধুর দিন ১৪ ডিসেম্বর, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে রহস্যজনকভাবে দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ হত্যার শিকার হয়। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ২৫ মার্চের কালরাতেও বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে মর্মান্তিকভাবে জীবন দিয়েছেন। প্রতি বছর এ দিনে জাতি আন্তরিক শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করে। স্মরণ করে দেশের জন্য তাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের অমর কাহিনী। বুদ্ধিবৃত্তির নির্মোহ চর্চার মাধ্যমে জাতীয় প্রগতি ও অগ্রগতি অর্জনে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা ও কর্মকাণ্ড গুরুত্বের সাথে সামনে রাখতে হবে। তাদের দেখানো পথেই এগিয়ে যেতে হবে আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার পথে।

স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারী বুদ্ধিজীবীরা তাদের বুদ্ধি ও মননশীলতার চর্চার মাধ্যমে জাতির শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তাদের মতো খ্যাতনামা লেখক-সাংবাদিক, সাহিত্যিক-চিকিৎসক, শিক্ষক-শিল্পীসহ নানা প্রতিভার অধিকারী, বুদ্ধিজীবীরা জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা আর দূরদর্শিতা দিয়ে সাধ্যমতো ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে দৃঢ়তার সাথে সব রকমের সহায়তা দিয়েছিলেন। সে পথে অবশেষে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র- বাংলাদেশ। দেশের এ মেধাবী সন্তানদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা ও দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন ছিল এমন এক বাংলাদেশের সুপ্রতিষ্ঠা, যা হবে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষা ও বিত্ত-সম্পদের ক্ষেত্রে পুরো বিশ্বে উল্লেখযোগ্য। তাদের আন্তরিক প্রত্যাশা ছিল অশিক্ষা, অপুষ্টি, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও দুর্নীতি থেকে সর্বতোভাবে মুক্ত কল্যাণময় একটি রাষ্ট্র। সেই দেশে সবার মৌলিক সব প্রয়োজন পূরণ করা হবে। তা পূরণ হবে খুব সহজে। সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ ছিল সে সব বুদ্ধিজীবীর বড় আশা। তারা চেয়েছেন ঐক্যবদ্ধ জাতি; এক সুসংহত রাষ্ট্র। কল্যাণময় এবং শান্তিপূর্ণ সমাজে সবার মর্যাদা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার পাশাপাশি সন্ত্রাস সহিংসতামুক্ত অনাবিল পরিবেশই ছিল তাদের ঐকান্তিক আকাক্সক্ষা। তাদের কাক্সিক্ষত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমরা সফলতা অর্জন করতে পারিনি।

সদ্য সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের মানবাধিকার পদদলিত করেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো স¤পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা জ্ঞান-বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার চর্চা নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্বোচ্চ গুরুত্বের কথা বললেও মূলত তারা লুটপাট ও সম্পদ পাচারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। কিছু উন্নয়ন হলেও সেটি মোটেও টেকসই হয়নি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করেছে। তবে যে জঞ্জাল হাসিনা ও তার দোসররা সৃষ্টি করেছে সেটি উপড়ে ফেলা বিশাল এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে এই সরকারের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
আজকের এই দিনে দরকার আত্মসমালোচনা, আত্মবিশ্লেষণ। দরকার জাতির মধ্যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য। সবাই মিলে একটি উন্নত প্রগতিশীল ভবিষ্যৎ নির্মাণের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবীদের বলিদানকে সার্থক করে তুলতে পারি আমরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement