১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
খাদ্যশস্য উৎপাদনের এখন সর্বোচ্চ মৌসুম

পর্যাপ্ত সার সরবরাহে নজর দিন

-


আমাদের অর্থনীতিতে কৃষির প্রভাব গভীর ও বিস্তৃত। তবে এখন আর আগের মতো কৃষিপ্রধান দেশ নই আমরা। তবুও কৃষি থেকে আসে দেশের মানুষের চাহিদার প্রায় সবটুকু খাদ্যশস্য। সামান্য যা ঘাটতি থাকে তা আমদানি করতে হয়।
কৃষিপণ্য উৎপাদনে অপরিহার্য একটি উপাদান রাসায়নিক সার। এর সরবরাহে সঙ্কট দেখা দিলে চাষাবাদ ব্যাহত হয়। অতীতে এমন হয়েছে যে, দেশে সারসঙ্কটে কৃষকরা আন্দোলনে নেমে জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন। তাই সরকারকে সার সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয়।
পরিসংখ্যান বলছে, এবার বাজারে সার সরবরাহে টান পড়েছে। বিভিন্ন জেলায় অতিরিক্ত দামে ডিলাররা সার বিক্রি করছেন- এমন খবর পাওয়া গেছে। প্রতি কেজি ইউরিয়া সার কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হওয়ার কথা ২৭ টাকায়। কিন্তু সরবরাহে ঘাটতির কথা বলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিলাররা তা বিক্রি করছেন ৩২ টাকায়। একইভাবে এমওপি প্রতি কেজি ২০ টাকার পরিবর্তে ২৪ টাকায়, ডিএপি ২১ টাকার বদলে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, বস্তাপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম রাখছেন বিক্রেতারা। তবে বেশি দামে সার বিক্রি করায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে মাঠপ্রশাসন।
অতিরিক্ত দামে এমন এক সময়ে কৃষকদের সার কিনতে হচ্ছে যখন চাল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মৌসুম বোরো আবাদ শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বোরো মৌসুমে দুই কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদন হয়, যা দেশের সারা বছরের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে। একই সাথে এ মৌসুমে সারা বছরে পেঁয়াজ, আলু, সরিষা, গম উৎপাদন হয়। প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদনের এ সময়ে বাজারে বিভিন্ন সবজির দাম থাকে নাগালের মধ্যে। এ জন্য ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সারের ব্যবহার হয় সর্বোচ্চ।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া নন-ইউরিয়া ও ইউরিয়া সারের মজুদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নন-ইউরিয়া হিসেবে পরিচিত টিএসপি সারের ডিসেম্বর-মার্চ পর্যন্ত চার মাসের চাহিদা তিন লাখ ৬১ হাজার টন, ডিএপি সারের চাহিদা সাত লাখ ৪৪ হাজার টন এবং এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে চার লাখ ১৩ হাজার টন। অথচ বিএডিসির গুদাম ও পরিবহনাধীন সারের মোট মজুদের মধ্যে টিএসপি এক লাখ দুই হাজার টন, ডিএপি এক লাখ ৩৯ হাজার টন এবং এমওপি সার রয়েছে দুই লাখ ২৯ হাজার টন। বিএডিসির হাতে জানুয়ারিতে সরবরাহের মতো পর্যাপ্ত সারের মজুদ নেই। আবার বেসরকারি আমদানিকারকদের কাছেও মজুদ নেই। বিএডিসি সূত্রমতে, আমদানির পাইপলাইনেও পর্যাপ্ত পরিমাণ সার নেই, যা দিয়ে পিক সিজনের চাহিদা সামাল দেয়া সম্ভব।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন, ডিসেম্বরে নিরাপত্তা মজুদসহ বিসিআইসির হাতে আছে সাত লাখ ২৫ হাজার টন। যে মজুদ দেখানো হয়েছে ডিসেম্বরে দেড় লাখ টনের সম্ভাব্য আমদানি ধরে, সেটি এখনো দেশে পৌঁছেনি। অর্থাৎ ডিসেম্বরের সার ব্যবহার করলে হাত পড়বে নিরাপত্তা মজুদে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সম্ভাব্য আমদানি ধরেও আগামী মার্চে গিয়ে প্রায় দেড় লাখ টন ইউরিয়া ব্যবহার করতে হবে নিরাপত্তা মজুদ থেকে। যেটি উৎপাদন বৃদ্ধি করে বা বর্তমান আমদানি চুক্তির বাইরে গিয়ে সংগ্রহ করতে হবে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলতে না পারলে খাদ্যশস্য উৎপাদনের এ মৌসুমে সারের সরবরাহে চরম অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। আমরা মনে করি, কোনোভাবেই যাতে সার সরবরাহে ব্যাঘাত না ঘটে, সে দিকে সরকার নজর দেবে।


আরো সংবাদ



premium cement