১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ইন্ধন

সংখ্যালঘু পীড়নের মিথ্যা প্রচারণা

-

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘু নিপীড়নের দুই হাজার ১০টি ঘটনা রেকর্ড করে। এসব ঘটনা ৪ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে ঘটে বলে দাবি করা হয়। পরিষদের তালিকার কিছু অংশ যাচাই করেছে একটি জাতীয় দৈনিক। তাতে দেখা গেছে, সাম্প্রদায়িক হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়া ঘটনার আটটিতেই সাম্প্রদায়িক কোনো অনুষঙ্গ ছিল না। অন্য হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখনো উন্মোচন হয়নি। কিন্তু এটিকে সংখ্যালঘু হত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। নিহতদের একজন রংপুরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায়। ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী গুণ্ডাদের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। একপর্যায়ে পালাতে গিয়ে উত্তেজিত জনতার পিটুনিতে নিহত হন। ওই ঘটনায় ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন স্থানীয় পূজা উদযাপন কমিটির সেক্রেটারি। সেই সাথে তিনি যে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সে তথ্য চেপে যাওয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানার উপ-পরিদর্শক সন্তোষ চৌধুরীর নামও তালিকায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে উল্লেøখ করা হয়েছে। পত্রিকাটি জানতে পেরেছে, প্রকাশ্যে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালান সন্তোষ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সারা দেশে ৪৪ জন পুলিশ সদস্য হত্যার শিকার হয়। এর মধ্যে ছয়জন হিন্দু। সন্তোষ তাদের একজন। প্রতিবেদনে উল্লিখিত অন্য ছয়টি হত্যার প্রত্যেকটিই ঘটে অভ্যুত্থানের সময় প্রতিপক্ষের পাল্টা আক্রমণে। সংখ্যালঘু বলে নয়।
ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, রাজধানীর রাজারবাগের পানির পাম্প এলাকায় ঝন্টু দাসের তিনটি দোকানে হামলা হয়। যাচাই করে দেখা গেল, ওই হামলা চালিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা পবন দাস। পবন জানাচ্ছেন, ঝন্টু ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়ক। গত সরকারের আমলে নিছক প্রতিহিংসার বশে ঝন্টু তাকে (পবনকে) পুলিশে ধরিয়ে দেয়, তাকে ৯০ দিন জেল খাটতে হয়েছে। সংখ্যালঘুদের নিজেদের মধ্যে সংঘটিত রাজনৈতিক বিরোধ ও হানাহানিকে সংখ্যাগুরুর অপরাধ হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি সাধারণ বিপদকেও রঙ লাগিয়ে সংখ্যালঘুর ওপর হামলা বলে সাজিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রতিবেদনের ১২২ পৃষ্ঠায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে সাত হিন্দুর দোকান পোড়ানো, লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়। দেখা গেল, বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে সে আগুন লাগে। তাতে সাতজন মুসলমানের দোকানও পুড়েছে। অথচ তার উল্লেখমাত্র নেই।
পত্রিকার রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে, ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের যে রিপোর্ট করেছে সেটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে হিন্দুদের ওপর নিপীড়নের এই অভিযোগ গুরুতর অপরাধ। পরিষদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ভারতের মিডিয়া আরো রঙ লাগিয়ে প্রচারণার তুফান বইয়ে দিচ্ছে। এদিকে সরকারের কোনো মনোযোগ নেই।
এতে স্পষ্ট হয়েছে, সংখ্যালঘুরা দেশের রাজনীতির ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। লক্ষ্য থাকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ফায়দা দেয়া এবং প্রতিবেশী দেশের নাক গলানোর সুযোগ করে দেয়া। অতি উৎসাহী এই গোষ্ঠীটি ডাহা মিথ্যা, কল্পকাহিনীকে হিন্দু নির্যাতন হিসেবে চালিয়ে দিতে দ্বিধা করছে না। এমন দায়-দায়িত্বহীন প্রতিবেদন রচনা বাংলাদেশের শত্রুদের কাছে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদকে এর দায় নিতে হবে।
ঐক্য পরিষদের ভুয়া প্রচারণার বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement