সীমান্তে সিন্ডিকেট কিভাবে গড়ে ওঠে?
- ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দৈনিক নয়া দিগন্তের দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, পটপরিবর্তনের পর সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকাগুলোয় চোরাচালান অনেকটা বন্ধ থাকলেও সিন্ডিকেট বদলিয়ে আবারো সক্রিয় হয়েছে। চোরাকারবারিরা আগে আওয়ামী লীগের সাইন বোর্ড ব্যবহার করলেও পটপরিবর্তনের পর বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীর আহ্বানে বিভিন্ন সমাবেশে যোগদানের মাধ্যমে নতুন পরিচয়ে বৈধতা নিয়েছে সীমান্ত এলাকায়। এতে সীমান্তে চোরাচালান আগের চেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সরেজমিন উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর, বাংলাবাজার ও বোগলাবাজার- এই তিনটি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী শতাধিক স্থান দিয়ে চোরাই পণ্য অবাধে দেশে প্রবেশ করে। তারা ভারতের কিছু ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ করে চোরাই পথে মাল আনা-নেয়া করছে। এসব পণ্য স্থানীয়ভাবে ‘বুঙ্গার মাল’ নামে পরিচিত। এই ‘বুঙ্গার মালে’ সয়লাব সুনামগঞ্জ ও সিলেটের হাট-বাজার।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সীমান্তের বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, চোরাই পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসছে চিনি। চোরাকারবারিদের নিয়োগ করা শ্রমিকরা দিন-রাত সুযোগ বুঝে ৫০ কেজি চিনির একেকটি বস্তা মাথায় করে সীমান্ত পার করে। পরে মোটরসাইকেল কিংবা অটোরিকশা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে মজুদ করা হয়। এরপর এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর তৎপরতায় এসব চিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। একইভাবে প্রসাধনসামগ্রী, কাপড়, মাদক, আপেল, কম্বল, গরু, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন পণ্য আসছে এবং মাছ-রসুনসহ বাংলাদেশী বিভিন্ন পণ্য ভারতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান পিএসসি বলেন, চোরাচালান রোধে আমরা কঠিনভাবে দায়িত্ব পালন করছি। এখানে ‘কোনো ছাড় দিচ্ছি না’। চোরাচালান রোধে নিয়মিত অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে।
স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে চোরাকারবারিরা তাদের বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিয়ে নিজেদের আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করার মাধ্যমে সিন্ডিকেট মজবুত করলেও পটপরিবর্তনের পরপর তারা হয়ে গেছে এখন বিএনপির সাইন বোর্ড ব্যবহারকারী নেতা। এ যেন দল যাই হোক, চোরাকারবারি আর স্থানীয় নেতারা ‘ভাই ভাই’।
আরো জানা যায়, ক্ষমতার পালাবদলের পর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে নেয়া স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীর পৃষ্ঠপোষকতায় সীমান্ত এলাকা থেকে চিনিসহ চোরাই পণ্য ট্রাক কিংবা পিকআপে করে এনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। এর বিনিময়ে তারা বড় অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, আগে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুসারীরা মহাসড়ক দু’টিতে পাহারা দিয়ে প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চোরাই চিনির ট্রাক ছাতক শহর পার করত।
এখানকার সিন্ডিকেটটি নিজেদের স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী বলে পরিচয় দিচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সামছুল হক নমু বলেন, বিএনপি কিংবা সহযোগী সংগঠনের যে কারো বিরুদ্ধে অনৈতিক অভিযোগের প্রমাণ পেলে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রশাসনের সাথে দেখা করে বলেছি, এ ব্যাপারে (চোরাচালান) বিএনপির কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। আমাদের (বিএনপি) কেউ তদবির করলে তাকেও যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। বুঙ্গার চিনিসহ চোরাই পণ্য জব্দ করতে পুলিশ শক্ত আছে বলে দাবি করেছেন থানার ওসি জাহিদুল হক। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, দোয়ারাবাজার থানায় যোগদানের সাথে সাথে চোরাচালানবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করেছি। পুলিশের নিয়মিত অভিযানে চোরাকারবারিরা তাদের রাস্তা পরিবর্তন করতে পারে, সে দিকে আমাদের কড়া নজর রয়েছে। স্থানীয়দের সহযোগিতা পেলে মাদক ও চোরাচালান দমনে পুলিশের কাজ আরো সহজ হবে।
মূলত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চোরাচালানসহ দুর্নীতির প্রসার ঘটে। সবার দুর্নীতির ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা থাকা দরকার। বিজিবির ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করা উচিত। অন্যথায় চোরাচালান সমাজকে গ্রাস করে নেবে। আমরা আশা করি, সরকার সীমান্তের দিকে নজর দেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা