১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক

বাস্তবতা মেনেই সম্পর্ক এগোতে হবে

-

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তীব্র জনরোষের মুখে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ মনে করেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতকে একতরফা সুবিধা দেয়ার পুরস্কার এটি।
শেখ হাসিনার পতনে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে না দিল্লি। তাই হাসিনা-উত্তর ঢাকার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে বিরূপ মনোভাব দেখাচ্ছে। ভারতের এ প্রবণতা অন্য প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রেও সত্য। ফলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের স্পষ্ট আন্তরিকতা থাকলেও ৫ আগস্টের পর দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে।
এখন দিল্লি আর বলছে না, অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানো দু’দেশের সম্পর্ক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় আগের মতো ঠিকঠাক রয়েছে। ভারত যে বাংলাদেশকে এখন রীতিমতো শত্রুরাষ্ট্রের নজরে দেখছে তাতে সন্দেহ নেই। ভারতীয় একশ্রেণীর গণমাধ্যমের প্রোপাগান্ডা দেখে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ভারতের অসংবেদনশীল মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে গেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশে অতিকল্পিত সাম্প্রদায়িক আক্রমণের গল্প ফাঁদছে এবং নির্লজ্জভাবে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। লক্ষণীয়, ভারতের অভ্যন্তরীণ কিছু গোষ্ঠীর উসকানি এবং বাগাড়ম্বরের ফল হিসেবে সেখানে বাংলাদেশের দু’টি মিশনে সম্প্রতি উগ্র হিন্দুরা আক্রমণ করেছে। ফলে এ দেশের মানুষের ভারতের প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক।
বাংলাদেশে বিপ্লবের মাত্র এক মাসের মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সে দেশের সশস্ত্রবাহিনীকে বাংলাদেশ সীমান্তে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। তিনি ইসরাইল-হামাস এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সাথে বাংলাদেশ পরিস্থিতির তুলনা করেন। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রক্ষায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে জাতিসঙ্ঘের প্রতি আবেদন জানানোর জন্য মোদি সরকারকে আহ্বান জানান। বাংলাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ভারতীয় মানসে কী ক্ষত তৈরি করেছে, তা দেশটির নেতাদের এসব বক্তব্যে স্পষ্ট। তবে নয়া দিল্লির সাউথ ব্লক হয়তো বাস্তবতা বুঝতে শুরু করেছে। এ জন্য নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কূটনৈতিক কৌশল নির্ধারণে সচেষ্ট হয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে গত সোমবার অনুষ্ঠিত বৈঠক এরই ইঙ্গিত বলে মনে হয়। যদিও দিল্লি বাংলাদেশনীতিতে পরিবর্তনের কোনো ঘোষণা এখনো দেয়নি। বাংলাদেশের জনগণের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথাও বলেনি সে দেশের রাজনৈতিক মহল।
গত সোমবার পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো: জসীম উদ্দিন এ আলোচনাকে দু’দেশের মধ্যে আস্থার ঘাটতি পূরণের পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বলে জানান। অন্য দিকে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি গঠনমূলক ও ইতিবাচক সম্পর্কের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কাজ করতে দিল্লির আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধু রাজনৈতিক নয়, বহুমাত্রিক। এর মধ্যে রয়েছে ব্যবসাবাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি ইত্যাদি। কিন্তু ভারতের অনাকাক্সিক্ষত আচরণ দু’দেশের সম্পর্কে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। এ দায় ভারতের একার। দু’দেশের সম্পর্ক আবার বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্থিতিশীল করতে দিল্লিকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনেই এগোতে হবে। এ জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে ভারতে বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতা এবং পতিত শেখ হাসিনাকে মদদদান বন্ধ করা। একই সাথে নিজ নিজ দেশে সংখ্যালঘুদের টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করা।


আরো সংবাদ



premium cement