১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
অবৈধ বিদেশীরা ফোকলা করছে অর্থনীতি

বিঘ্ন ঘটাচ্ছে নিরাপত্তাব্যবস্থায়

-


আমাদের দেশে কত বিদেশী কাজ করছেন তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এ দিকে দেখা যায়, ভারতের প্রবাসী আয়ের তালিকায় বাংলাদেশ প্রথম সারিতে রয়েছে। বিগত সরকারের সময় এ দেশে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় কাজের সুযোগ পেয়েছেন। শিক্ষিত সক্ষম দেশীয় জনশক্তি যখন বেকার ঘুরছেন তখন সরকার এসব বিদেশীর চাকরির সহজ সুবিধা করে দিয়েছে। তাদের ব্যাপারে দেশের আইনপ্রয়োগ কিংবা একটি নিয়মের মধ্যে আনার ন্যূনতম তাগিদ বোধ করেনি সদ্য পতিত সরকার। ফলে লাখ লাখ বিদেশী কোনো ধরনের কর না দিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করছেন। আশার কথা হচ্ছে, বিদেশীদের ব্যাপারে জানতে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বিদেশী নাগরিকদের নোটিশ দিয়েছে। তাতে এ দেশে অবস্থানরতদের বৈধতা অর্জনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়দের সংখ্যা কত তা জানানোর দাবি ওঠে। সরকার এই জনদাবির প্রতি সাড়াদানে কোনো তাগিদ বোধ করেনি। বিভিন্নভাবে বিষয়টি জানা গেছে, ভারতীয়দের এ দেশে আগমন এবং বৈধ-অবৈধভাবে সুযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার নীরবে সমর্থন করে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে ভারতীয়রা কেবল সংখ্যায় অধিক নয়, তাদের দাপট ও প্রভাব দেখা গেছে।

২০২০ সালে ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ দেশে পাঁচ লাখ ভারতীয় চাকরি করেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশের ওয়ার্ক পারমিট আছে। সফটওয়্যার ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অনেকটা ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণে। ট্রাভেল এজেন্টদের বড় অংশ ভারতীয়। পোশাক খাতের টেকনিশিয়ান, ডিজাইনার, সংবাদমাদ্যম, বিজ্ঞাপন জগৎ, পরামর্শক, অ্যাকাউন্ট্যান্ট এমনকি প্রশাসনিক কাজে বিপুল ভারতীয় কাজ করছে। কোনো ধরনের নজরদারি কিংবা কড়াকড়ি না থাকায় ডলারে বেতন পাওয়া এসব ভারতীয় সহজে সেটি পাচার করছেন। ২০২৪ সালে এসে ভারতীয়দের সংখ্যা এ দেশে নিঃসন্দেহে আরো বেড়েছে। আশঙ্কার বিষয়- দেশটির নাগরিকরা আমাদের স্পর্শকাতর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে ছিল। এ খবরও জানা গেছে, সরকারের দুর্বলতার সুযোগে আমাদের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থার কার্যালয়ে তারা অনানুষ্ঠানিক আস্তানা গেড়ে বসেছিল। মূলত সরকার কেবল নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে এ দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভারতীয়দের প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছিল। এ সুযোগে তারা কেবল বিপুল অর্থনৈতিক সুবিধা বাগিয়েছে তা নয়, আমাদের জননিরাপত্তাও ভেঙে দিয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে চরম গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার। সর্বশেষ সরকারি তথ্যে জানা যাচ্ছে, দেশে বৈধ বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা মাত্র এক লাখ সাত হাজার। বাস্তবে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশীদের সংখ্যা আরো বেশ কয়েকগুণ বেশি।

দেশে বিপুল বেকার থাকার পরও ভারতের নাগরিকদের চাকরি দেয়া আত্মবিনাশী। সঙ্গত কারণে জরুরি ভিত্তিতে ভারতীয়সহ সব অবৈধ বিদেশী নাগরিক চিহ্নিত করে তাদের নিজ দেশে পাঠিয়ে দেশীয় বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। একান্ত যারা চাকরি করবেন তাদের সরকারকে কর দিতে হবে। একই সাথে চাকরিরত বিদেশীদের বাংলাদেশের যাবতীয় নিয়ম মানতে হবে। দেশের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানোর যেসব অভিযোগ বিদেশীদের বিরুদ্ধে উঠেছে সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement