১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতন

স্বৈরাচারমুক্ত পৃথিবীর অভিমুখে মানুষ

-

বাংলাদেশে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন হতে না হতেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার আরেক কুখ্যাত স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছে। গতকাল সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বরাতে বিবিসি জানায়, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, আসাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ইউনিফর্ম খুলে পালাতে দেখা গেছে। বাশার আল-আসাদের পতনে নেতৃত্বে ছিল হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামে একটি সংগঠন। বাশার আল-আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় একটি পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান হলো। সময়ের পরিক্রমায় পৃথিবীতে স্বৈরশাকদের পতন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। যেমন- এর আগে আরব বসন্তের ঢেউ লেগে তিউনিসিয়ার কুখ্যাত স্বৈরশাসক বেন আলী ও মিসরের হোসনি মোবারকের পতন হয়েছিল। বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মুক্তিকামী মানুষ যেন বারবার জানান দিচ্ছে, পৃথিবীতে স্বৈরশাসকের কোনো স্থান নেই। পৃথিবী হবে স্বৈরশাসনমুক্ত।
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পরিবারের শাসন শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালে হাফেজ আল-আসাদের মাধ্যমে। এরপর ২০০০ সালে পিতা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ক্ষমতা হাতে নেন বাশার আল-আসাদ। শুরুর দিকে তাকে নিয়ে জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। জনগণের প্রত্যাশা ছিল- যুবক বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সংস্কার আনবেন। কিন্তু বাশার আল-আসাদ জনগণের সে আশা পূরণে ব্যর্থ হন। ক্ষমতায় এসে তিনি বিরোধীদের দমন-পীড়ন, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও সেনাবাহিনীকে করায়ত্ত করে কার্যত একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসকে পরিণত হন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে আরব বসন্তের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান শুরু হলে তার আঁচ সিরিয়াতেও লাগে। তিউনিসিয়া, মিসরের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু বেন আলী ও হোসনি মোবারকের পতন হলেও আন্দোলনকারীদের বিদেশী মদদপুষ্ট আখ্যায়িত করে ব্যাপক দমন-পীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হন বাশার আল-আসাদ। সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দেন বিরোধীদের নির্মূলে। ফলে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। গত ১৩ বছরের অব্যাহত গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত মারা গেছেন সিরিয়ার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। এ ছাড়াও দেশটির প্রায় আড়াই কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকই উদ্বাস্তু হয়ে পড়েন।
বাশার আল-আসাদের পতনই সিরিয়ার শেষ কথা নয়। ২০১৮ সাল থেকে তিনটি শক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে সিরিয়া। বাশার আল-আসাদের শাসনাধীন অঞ্চল ছাড়াও দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ দখল করে নেয় কুর্দি বাহিনী এবং ইসলামী বিদ্রোহীরা। অন্য দিকে সিরিয়াকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের মতো বৃহৎ এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যক্রম কারো অজানা নয়। এখন বাশারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশটিতে যেন নতুন করে আর কোনো যুদ্ধ না বাধে সেটি মানুষের চাওয়া। একই সাথে সিরিয়ার শাসনক্ষমতা এমন কোনো শক্তির হাতেও যাওয়া উচিত নয়, যারা সিরিয়ার মানুষের প্রতিনিধিত্ব না করে সন্ত্রাসী কায়দায় দেশকে শাসন করতে চায়। সিরিয়ায় এখন যুদ্ধ নয়, শান্তি প্রয়োজন। প্রয়োজন একটি কার্যকর সরকারের। সিরিয়ার জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনাই হোক পরবর্তী শাসকদের অঙ্গীকার।

 


আরো সংবাদ



premium cement