১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
দেশের ধর্মীয় নেতারাও ঐক্যবদ্ধ

বানোয়াট প্রচারণার উপযুক্ত জবাব দিন

-

বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। শত শত বছর ধরে এ দেশে সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, তাদের উপাসনালয় ভাঙার ঘটনা কিছু ক্ষেত্রে ঘটেছে। তবে এই অপকর্ম তারাই করে; যারা এ থেকে ফায়দা লুটে। বিশেষত রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল এবং সম্পদ দখলে এসব ঘটনা ঘটানো হয়। এ জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়কে দায় দেয়া যায় না; বরং এ দেশে তারা সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সবসময় সচেষ্ট থাকে। এবার ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর সারা দেশে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দির পাহার দিয়েছে তারা।
দুর্ভাগ্য, একটা গোষ্ঠী তারপরও এ দেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ আনে। প্রতিবেশী দেশের সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতারা এবার তা বেপরোয়াভাবে করছেন। ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যম ব্যাপকভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। বানোয়াট সংবাদ ও অপতথ্যে জোয়ার তৈরি করা হচ্ছে প্রতিদিন। ক্ষেত্রবিশেষে ঘটনা ঘটছে একেবারে উল্টো। কথিত সনাতনী নেতা চিন্ময় দাসকে নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ইসকনের উগ্র সদস্যরা এক মুসলিম আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। প্রকৃত ঘটনা প্রচার না করে বলা হয়, মুসলমানরা চিন্ময়ের আইনজীবীকে হত্যা করেছে।
এক সপ্তাহ চলে গেলেও ভারতীয় জনগণকে দেশটির মিডিয়া বিষয়টি পরিষ্কার করেনি যে, সেখানে উগ্র হিন্দুরা একজন মুসলমান আইনজীবীকে হত্যা করেছে। উল্টো প্রতিদিন সংখ্যালঘুদের ওপর দমন-পীড়ন ও হামলার নতুন নতুন কল্পকাহিনী প্রচার করছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হাসিনার খুনি বাহিনীর আক্রমণের ঘটনাকে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে হিন্দুদের ওপর হামলা বলে। কিছু টেলিভিশন চ্যানেল এমনভাবে এগুলোর ফুটেজ দেখাচ্ছে; যাতে মনে হওয়া স্বভাবিক যেন, তারা জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা এমনকি কংগ্রেসসহ অন্যান্য দলের নেতারাও অপতথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে নিশানা করে হুমকি দিচ্ছেন। দেশটির সরকারি প্রতিক্রিয়ায় এর প্রভাব রয়েছে।
ভারতে উগ্র হিন্দুরা বাংলাদেশী কনসুলেটে হামলা ভাঙচুর চালায়। দুই দেশের মধ্যে পণ্য চলাচলে বাধার সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বাইরের এই উৎপাতে ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। তাই জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সাথে বৈঠক করেছে। ভারতের এমন আচরণকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অসৎ উদ্দেশ্যে পরিচালিত বলে মনে করছেন সবাই। সঙ্গতকারণে দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় ড. ইউনূস সরকার ধর্মীয় নেতাদের সাথেও সংলাপ করেছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নেতাদের কথা ড. ইউনূস মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। তারা জানিয়েছেন বাংলাদেশে কোনো ধরনের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা নেই। হিন্দু নেতারা বলেছেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও দেশটির রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যেসব দাবি করছেন, তা সত্য নয়। এমন প্রচারণার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন ধর্মীয় নেতারা।
ভারতকে বুঝতে হবে বাংলাদেশে একটি গণ-অভুত্থান হয়েছে। এতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেছেন। নজিরবিহীন এই পরিবর্তনের স্বীকৃতি না দিয়ে গায়ের জোরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রচারণা চালালে তা হালে পানি পাবে না। এতে কোনো কিছু অর্জন করাও সম্ভব নয়। আমরা আশা করব, দিল্লি বাস্তবতা উপলব্ধি করে দেশটির মিডিয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে যে বানোয়াট প্রচারণা চলছে তা বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement