১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে টেন্ডার জালিয়াতি

দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করুন

-

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে দেশে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। এর মাধ্যমে সরকারঘনিষ্ঠদের রাষ্ট্রীয় তহবিল লোপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে রাষ্ট্রের সর্বত্র দুর্নীতি জেঁকে বসে। অবস্থা এত নাজুক যে, দেশের অর্থনীতির হাল জানতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার হয়েছে।
দুর্নীতির মহোৎসব হয়েছে সরকারের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য পাঠ্যবই ছাপানোতেও। পাঠ্যবই ছাপানোর টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র জালিয়াতি করছিল। তা হয়ে আসছিল শিক্ষা বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার সহায়তায়। এই জালিয়াতির মধ্যে ছিল বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে ছাপানোর দর ঠিক করা। নি¤œমানের বই ছাপানো।
নয়া দিগন্তের খবর অনুযায়ী, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ তৎপরতায় টেন্ডার জালিয়াত-চক্রের প্রধানকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যে মূল অভিযুক্তকে টেন্ডারপ্রক্রিয়া, পাঠ্যপুস্তক এবং মুদ্রণকারী বিভিন্ন ছাপাখানায় নজরদারির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশের প্রাকপ্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যন্ত (এ বছর ১০ম শ্রেণীর বইসহ) বিনামূল্যের ৪০ কোটির বেশি বই মুদ্রণের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রথম থেকে এবারের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকে এনসিটিবিও তথ্য সংগ্রহ ও অনুসন্ধান চালায়। পরবর্তীতে দেখা যায়, টেন্ডার আহ্বানের পর বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ করে প্রাক্কলিত দর, সর্বনিম্ন দর, টেন্ডারে অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রেস মালিকদের দাখিল করা দর এসব অতি গোপনীয় বিষয় এক-দু’জনের মাধ্যমে বাইরে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রকৃত দরদাতা কিংবা যোগ্য ও সর্বনি¤œ দরদাতা সঠিকভাবে বাছাই করা দুরূহ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে সঠিক উপায়ে নিরপেক্ষ এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনা করা এনসিটিবির জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে সরকারের শত শত কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। এবারো এমন করতে অপতৎপরতায় লিপ্ত ছিল একটি চক্রটি।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, স্বৈরাচারের জমানায় টেন্ডার জালিয়াতি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছু আমলার সহায়তায় আওয়ামীপন্থী কিছু প্রেসকে অতিরিক্ত দরে কাজ দেয়া হতো। এসব অনিয়ম ও নীতিবহির্ভূত কাজে এনসিটিবির অভ্যন্তরে কারিগরি আর ট্যাকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়া হতো মেইন্টেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে। তবে হাসিনার আমলে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কারসাজির মাধ্যমে সরকারের হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ থাকলেও তা উদঘাটনে কোনো উদ্যোগ নেয়া বা চেষ্টা করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার এবার এনসিটিবি নতুনভাবে সাজানোর পর নতুন টিম দুর্নীতি আর জালিয়াতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা প্রদর্শনের নীতি নেয়। সঙ্গত কারণে এ বছর বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজে টেন্ডার নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর জালিয়াত চক্রের হোতাকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।
আমরা আশা করব, যারা এই অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে এ বছর শিক্ষার্থীরা যাতে ভালো বই পায় তাও নিশ্চিত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement