১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
তৈরী পোশাক খাতে অস্থিরতা প্রশমন

বেতন বৃদ্ধি বড় দাওয়াই

-

দেশের রফতানি আয়ের শীর্ষে রয়েছে তৈরী পোশাক শিল্প। এ খাতে কর্মরত অর্ধকোটি মানুষ। তাদের ওপর নির্ভরশীল অন্তত দুই কোটি পোষ্য। গার্মেন্ট সেক্টর জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তবে এ খাতে অস্থিরতা পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। যেকোনো সময় আবার অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের তথ্যানুযায়ী, মজুরির বকেয়া পরিশোধ, বোনাস প্রদান ও বেতন বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান গার্মেন্ট শিল্প অঞ্চলে ৯৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগই ঘটে আশুলিয়া ও গাজীপুরে। তবে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর থেকে পতিত সরকারের দোসররা ঠাণ্ডামাথায় এ খাতে অস্থিরতা জিইয়ে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, গার্মেন্ট খাতে সাম্প্রতিক অস্থিরতায় আনুমানিক ৩০০-৪০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এ সময় প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার কার্যাদেশ পাশের দেশগুলোতে চলে গেছে, যা দেশের মোট পোশাক রফতানির ৫-৬ শতাংশ।
এ কথা ঠিক যে, শ্রমিকবঞ্চনাও অস্থিরতার জন্য দায়ী। বাস্তবতা হলো- এ শিল্পে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম। তাই মাঝে মধ্যেই কম বেতনের অন্ধ গলি দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। আর এখন এই অস্থিরতা জিইয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চান শেখ হাসিনার সুবিধাভোগী অনেক গার্মেন্ট মালিক। তবে আশার কথা, অস্থিরতা দূর করতে নেয়া হয়েছে একগুচ্ছ পদক্ষেপ। এর অংশ হিসেবে বাড়ানো হচ্ছে পোশাককর্মীদের বেতনভাতা। গার্মেন্ট শ্রমিক নেতারা ১২ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন। অন্য দিকে মালিকরা বলছেন, ৭ শতাংশের বেশি বেতন বাড়ানোর সক্ষমতা তাদের নেই। শ্রম মন্ত্রণালয়ে গত মঙ্গলবার ন্যূনতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন ও বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের অনুষ্ঠিত চতুর্থ বৈঠকে তৈরী পোশাক কারখানার মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি বলেন, তারা ৭ শতাংশ বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন। সর্বশেষ এক বছর আগে ৫৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই সাথে তখন বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে বাড়ানোর ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নয়া দিগন্তকে বলেন, তারা মজুরি বার্ষিক ১২ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।
এ দেশে তৈরী পোশাক কারখানাসহ সব খাতে শ্রমিকদের মজুরি ঐতিহাসিকভাবে একটি সাধারণ জীবনযাপনের প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে গার্মেন্ট খাতে সর্বশেষ যে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে উচ্চ মুদ্র্রাস্ফীতির চাপের মধ্যে সেটিও যথেষ্ট নয়। বর্তমানে একজন প্রবেশ-স্তরের তৈরী পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা। গত ডিসেম্বর থেকে নতুন এ বেতনকাঠামো কার্যকর হয়েছে। এর আগে ছিল আট হাজার টাকা।
আমরা মনে করি, পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, গার্মেন্ট খাতে অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষ দ্রুত প্রশমনে বেতন বাড়িয়ে তা কার্যকর করতে হবে। এটিই এ খাতে স্থিতিশীলতা আনার বড় দাওয়াই।


আরো সংবাদ



premium cement