১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও বেতন নিয়মিত

অনিয়মই যেখানে নিয়ম

-

একটি জাতীয় দৈনিকের ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উম্মে হাবিবা নামে একজন সহকারী শিক্ষক বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় গত ছয় মাস অনুপস্থিত। কিন্তু তারপরও নিয়মিত বেতনভাতা পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অনিয়মসহ অন্য অভিযোগও আছে। যেমন, ছাত্রছাত্রীদের মারধর, শিক্ষক, অভিভাবক ও এসএমসি অর্থাৎ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণ ইত্যাদি। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর ছয়বার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করেন। আর অভিভাবক ও এসএমসি সদস্যরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গণস্বাক্ষর নিয়ে তিনবার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গত সেপ্টেম্বরে প্রধান শিক্ষক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, গত ১১ জুনের পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। এ ছাড়াও ইতঃপূর্বে বিদ্যালয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও কমিটির সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার এবং শিক্ষার্থীদের বেদম প্রহার করার কথা উল্লেখ রয়েছে। ফলে বিদ্যালয় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও অভিভাবকরা ওই শিক্ষককে দ্রুত প্রত্যাহার না করলে তাদের ছেলেমেয়েকে ভর্তি করাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ব্যাপারে তারা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন করেন।
সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, গত ১৯ মে থেকে বিদ্যালয় হাজিরা খাতায় উম্মে হাবিবা অনুপস্থিত। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ৪৩ জন অভিভাবক ওই শিক্ষককে প্রত্যাহারের দাবিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘এ স্কুলে যোগ দেয়ার প্রথম থেকেই সহকারী শিক্ষক উম্মে হাবিবা নিয়মিত আসেন না। সপ্তাহে দু-তিন দিন আসেন মাত্র; কিন্তু তিনি নিয়মিত বেতন তোলেন।’
জানা যায়, ২০১৮ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ওই বিদ্যালয়ে যোগ দেন উম্মে হাবিবা। প্রায় ছয় বছর ধরে একই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তিনি। কিন্তু প্রায়ই বিদ্যালয়ে আসেন না। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক উম্মে হাবিবার সাথে যোগাযোগের কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, ‘গত নভেম্বর থেকে ওই শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে জানাননি। আর কোনো শিক্ষক স্কুলে না গিয়ে সরকারি বেতনভাতা নিতে পারেন না। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘সবার জন্য শিক্ষা’ একটি আপ্তবাক্য। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে অনিয়মই যেখানে নিয়ম। ফেনীর চরমজলিসপুর এর একটি নজিরমাত্র।
প্রশ্ন হলো, এ অনিয়ম কতদিন চলবে? শিক্ষার মতো মৌলিক বিষয়ে অনিয়ম চলতে দেয়া যায় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জাতির হৃৎপিণ্ডের মতো। আর এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু দেশের বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা খারাপ। আশা করি, সরকার অবিলম্বে এ দিকে নজর দেবে।


আরো সংবাদ



premium cement