০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`
চোরতন্ত্র যেন অব্যাহত না থাকে

সেবা খাতে দুর্র্নীতি রোধ করুন

-

বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। বলেছে, গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। কমিটির প্রধান বলেছেন, দেশে রীতিমতো একটি চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল পতিত সরকার। সেই চোরতন্ত্রের মূল স্তম্ভ ছিল সামরিক-বেসামরিক উভয় শ্রেণীর আমলা। এসব আমলার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ফ্যাসিস্ট শাসকদের দোসর ও সুবিধাভোগী রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণি-পেশার লোকজন দুর্র্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে, আঙুল ফুলে বটগাছ হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের কয়েক কর্মকর্তার দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে এলেও অনেকের লুটপাটের খবর অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। বিশেষ করে যোগাযোগ খাতে প্রতিটি মেগা প্রকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ খরচ করে কার্যত যে বিপুল অর্থ তছরুপ ও পাচার করা হয়েছে তার কোনো তদন্ত ও অনুসন্ধান কেউ করেননি।
শ্বেতপত্র প্রকাশের পর পরই সামনে এসেছে, সেবা খাতে দুর্নীতির অবিশ্বাস্য চিত্র। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে জানা গেল, আওয়ামী সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সরকারি সেবা খাতের সংশ্লিষ্টরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেছে এক লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। দেশের প্রায় ৭২ শতাংশ পরিবারকে ঘুষ দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সেবা নিতে ৮৫ শতাংশের বেশি, পুলিশের কাছে ৭৪ শতাংশের বেশি এবং বিচারিক সেবা পেতে ৬২ শতাংশের বেশি মানুষকে ঘুষ দিতে হয়। বলা হয়েছে, এ তিন খাতে দুর্নীতি হয় সবচেয়ে বেশি। তবে দেশবাসী জানেন, সরকারি এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই; যেখানে সেবা পেতে মানুষ ঘুষ দিতে বাধ্য না হন।
টিআইবির প্রধান বলেছেন, আওয়ামী সরকারের সময় ঘুষ, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যেত না। বর্তমান সরকারের মেয়াদেও সব কিছু সম্ভব হবে এমন আশা করেন না। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে এ সরকার একটি দৃষ্টান্ত রেখে যেতে পারে।
আমরাও এ নিয়ে আশাবাদী হতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আমরা আস্থাশীল। কিন্তু লুটপাট করে যারা অর্থনীতির সর্বনাশ করে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে গত চার মাসে কোনো সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। দুঃখজনক হলো, এখনো দুর্র্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার উদাহরণ সামনে আসছে। এমনকি কিছু রাজনৈতিক পক্ষ থেকে ফ্যাসিস্টদের প্রতি সহানুভূতির সুর শোনা যাচ্ছে।
টিআইবি তার রিপোর্টে দুর্নীতি রোধে ৯টি সুপারিশ যোগ করেছে। এর মধ্যে আছে- দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা, সেবাকার্যক্রম পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করা, সেবাদানকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য যুগোপযোগী আচরণবিধি প্রণয়ন, সেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি ও পদায়ন করা, অভিযুক্তদের পদোন্নতি ও পদায়ন বন্ধ করা, তাদের বার্ষিক হালনাগাদ সম্পদ-বিবরণী জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদি।
এসব সুপারিশ ময়লার ঝুড়িতে ছুড়ে না ফেলে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলে, আমাদের বিশ্বাস, ঘুষের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে দেশের মানুষ কিছুটা হলেও রেহাই পাবেন।


আরো সংবাদ



premium cement