২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
চট্টগ্রামে আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা

জড়িতদের কোনো ছাড় নয়

-

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারের পতনের পর আমাদের দেশে সংখ্যালঘু কার্ড খেলে নৈরাজ্য সৃষ্টির যে ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে তার অন্যতম কুশীলব যে ইসকনসহ বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট, তা এখন না বললেও চলে। তারা ঠাণ্ডামাথায় বিতর্কিত এমন সব কর্মকাণ্ড শুরু করেছে, যা দেশ ও জাতীয় জীবনে অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে- এমন মনে করার অনেক কারণ আছে। বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট ও ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী না জেনে না বুঝে এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করতে গেছেন এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তারা মদদ পাচ্ছেন কোথা থেকে। শুধু স্বৈরাচারের ইন্ধন তাদের শক্তি নয়; বাইরের শক্তিরও এতে মদদ আছে বলে সন্দেহ করা অমূলক নয়। এমন সন্দেহ হওয়ার কারণ, প্রতিবেশী দেশের গত কয়েক মাসের বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা আমাদের সামনে রয়েছে। বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট নামের একটি সংগঠন সেই প্রচারণায় ঘি ঢালাতে হিন্দু নির্যাতনের বানোয়াট অভিযোগ নিয়ে মাঠে নেমেছে। ইসকনের কর্মকাণ্ডও একই সূত্রে গাঁথা।
এসব কর্মকাণ্ড শুধু নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ভারতবান্ধব স্বৈরাচারী সরকারকে ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা শুধু নয়; এর পেছনে আরো বড় ষড়যন্ত্র আছে। বাংলাদেশকে চিরকালের জন্য অনুগত করে রাখার লক্ষ্য আছে বাইরের শক্তির। বিষয়টি সেই বাস্তবতার নিরিখে বিচার করতে হবে। ভূ-রাজনীতির খেলার সাথে এটি জড়িত।
চিন্ময়ের কর্মকাণ্ড এবং তার জেরে আইনজীবী সাইফুল হত্যার বিচার এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য ও নিজস্ব পরিচয় নিয়ে বাঁচতে পারবেন কি না এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটিও সামনে চলে এসেছে। অনেকে মনে করেন, চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার বিচারের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে কতটা শক্তিশালী ও ইনসাফ কায়েমে সক্ষম।
রাষ্ট্রবিরোধী কাজের বিচার করতে না পারলে সেই দেশ কতটা স্বাধীন সে প্রশ্ন সামনে আসতে বাধ্য। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এক হিন্দু অ্যাকটিভিস্ট বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছিল। তখনকার সরকার ওই নারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত কয়েক বছরে কিছু সংখ্যালঘু এমন অনেক ঘটনার জন্ম দিয়েছে যেগুলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসে সরাসরি উসকানির পর্যায়ে পড়ে। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সর্বশেষ একজন সরকারি কৌঁসুলিকে কুপিয়ে এবং ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হলো। এতে এ দেশের নব্বই ভাগ মানুষের উদারতা ও সহনশীলতাকে যে দুর্বলতা ভাবা হচ্ছে সেটি স্পষ্ট। কারো কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রীয় আইনের সীমা ছাড়িয়ে গেলে তা মেনে নেয়া যায় না। এটি রাষ্ট্রীয় সংহতির জন্য বিপজ্জনক বৈকি।
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল হত্যার নিন্দা ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। অনেক সংগঠন থেকে সাম্প্রদায়িক সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনার দাবি রাখে।
আমরা মনে করি, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন, যারা ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার দাবিদার এবং যারাই রাষ্ট্র নিয়ে ভাবেন তাদের কাছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেকোনো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমনের মতো পদক্ষেপ দেখতে চায়।


আরো সংবাদ



premium cement