২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের বিচার

সময়োপযোগী পদক্ষেপ

-

গুমের অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এ সংশোধনী আনা হয়েছে। আইনে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে সে অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। দেশে পূর্বে জোরপূর্বক গুমের বিচারের সুনির্দিষ্ট কোনো আইন ছিল না। অপহরণ আইনে গুমের বিচার করা হতো। ফলে আইনজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে গুমের বিচারের জন্য আলাদা আইন প্রণয়নের দাবি ছিল। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের বিচারের সিদ্ধান্ত সরকারের একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। সংশোধিত আইন অনুযায়ী এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম ছাড়াও পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার বাহিনী এবং অন্য কোনো বাহিনী ও বাহিনীর সদস্যের বিচারের বিধানও রাখা হয়েছে। সংশোধিত আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা বিস্তৃত করা হয়েছে। এখন অপহরণ, দাসত্ব, আটক, নির্যাতন, জোরপূর্বক নির্বাসন, যৌননিপীড়নের পাশাপাশি গুম, মানবপাচার, যৌন দাসত্ব, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি, গর্ভধারণ, বন্ধ্যত্বকরণকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া কাউকে বা কোনো জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক, জাতিগত বা ধর্মীয় পরিচয়ে আক্রমণ, নিপীড়ন করলে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
দেশে গত ১৬ বছরে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। শেখ হাসিনা তার ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্য মানুষ গুম করতে গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ বানিয়েছে। গুম হওয়ার পর অনেকে ফিরে এসেছেন আবার অনেকেই ফেরেননি। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা শাহ মো: ওয়ালীউল্লাহ ও মো: মোকাদ্দেস আলীসহ যারা ফিরে আসেননি তাদের পরিবার জানেন না তারা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা। কিংবা কিভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার গুম-খুনের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ২৯ আগস্ট গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হয়। এদিন গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
একই সাথে অন্তর্বর্তী সরকার কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ অনুযায়ী ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে ৫ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে। গুম কমিশন ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার গোপন বন্দিশালাগুলো শনাক্ত করেছে। এছাড়াও গুমের সাথে জড়িত উচ্চপদস্থ ২২ কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিল করেছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, দেশে গত ১৭ বছরে গুম হয়েছেন ৬২৯ জন। তবে অনেক মানবাধিকার সংগঠনের মতে, এই সময়ে দেশে গুমের শিকার মানুষের সংখ্যা ৬৫০ জনের মতো। এদের মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনো নিখোঁজ প্রায় ৪০০ জন।
যারা এখনো গুম রয়েছে তারা আদৌ বেঁচে আছেন কি না সেটি নিশ্চিত হওয়া খুব জরুরি। একই সাথে এই ট্রাইব্যুনালে দেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া নিকৃষ্ট গুম-খুনের ন্যায়বিচার একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে সেটিও কাম্য।


আরো সংবাদ



premium cement