২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পতিত সরকারের দুর্নীতিই কারণ

শিল্প খাতে ধস ঠেকানো জরুরি

-


পতিত শেখ হাসিনা সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতির মাশুল দিতে হচ্ছে দেশের শিল্প খাতকে। জ্বালানি খাতে সাংবিধানিক দায়মুক্তি দিয়ে নজিরবিহীন দুর্নীতির মহোৎসব চালানো হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করা হয়নি। উন্নয়নের বুলি আওড়ানো সরকারের সময়ে এমন উন্নয়ন ঘটেছে যে, আজ শিল্পপতিদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। শিল্পের এ দুর্দশা গত সরকারের পুরো সময়জুড়ে ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা সেই দুর্বৃত্ত সরকারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ধ্বজা উড়িয়েছেন। নিজেদের স্বার্থের পক্ষেও কোনো কথা বলেননি। এতদিনে তারা সোচ্চার হয়েছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রতিকার চাইছেন। বিষয়টি উল্লেখ করাও দৃষ্টিকটু। কিন্তু বাস্তব সত্য এটাই।
আজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসের অভাবে তৈরী পোশাক খাতে ৩০-৩৫ শতাংশ, ইস্পাত শিল্পে ২৫-৩০ শতাংশ এবং সিরামিক শিল্পে ৫০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ মুহূর্তে সরবরাহ করা হচ্ছে চাহিদার মাত্র অর্ধেকের কম গ্যাস। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত পল্লী বিদ্যুতের অভাবে ভুগছে। বিস্ময়কর ও আশঙ্কার কথা হলো, গত দুই বছরে দেশে জ্বালানির ব্যবহার বাড়েনি। তার মানে শিল্প খাত সঙ্কুুচিত হয়েছে।
গত শনিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সেমিনারে ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা জানান, গ্যাসসঙ্কটের কারণে শিল্পের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে বহু কারখানা বন্ধের পথে। তারা শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া এবং সিস্টেম লসের কারণে বছরে দেশে যে ১২ হাজার কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হচ্ছে তা বন্ধের দাবি জানান।

সেমিনারে ব্যবসায়ীদের দুরবস্থার পাশাপাশি সম্ভাবনার কথাও উঠে আসে। কেউ কেউ বলেছেন, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এ মুহূর্তে চীন থেকে বিনিয়োগ সরতে শুরু করেছে। এসব বিনিয়োগের পরবর্তী গন্তব্য ভারত, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশ। জ্বালানি সঙ্কট দূর করতে পারলে এ বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব।
কিন্তু এটাও সত্য যে, শুধু জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করাই বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট নয়। জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান যেটি মূল সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সেটি হলো, প্রতিযোগিতার পরিবেশের অভাব। সরকারি কেনাকাটায় যেমন, তেমনই বাজার বিকাশেও এটি জরুরি। গত সাড়ে ১৫ বছরে বড় ব্যবসায়ীদের অনেককে অন্যদের বঞ্চিত করে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করে নিজে লাভবান হওয়ার সুযোগ নিয়েছেন। সেই প্রবণতা থেকে তাদের বেরুতে হবে।
সরকারকেও নিতে হবে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। জ্বালানি খাতে দুর্নীতি ও সিস্টেম লস বন্ধ, ব্যবসায়ে সততা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা গেলে বিদেশী বিনিয়োগ যেমন আসবে তেমনই দেশীয় বিনিয়োগের সম্ভাবনাও বাড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement